দালাল ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না চট্টগ্রামের বিআরটিএ কার্যালয়ে। গাড়ির ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নতুন গাড়ির লাইসেন্সসহ সব কিছুতেই নির্ভর করতে হয় দালালদের উপর। আর দালাল ছাড়া সরাসরি কাজ করতে চাইলে ধীরগতিসহ পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। খবর – সময় টিভি
হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে কয়েকটি দালাল চক্র প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ছোট একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করে জীবন চলে সেলিম রেজার। কম খরচ আর দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য মোটর সাইকেল কিনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ বালুছড়া অফিসে টাকা জমা দেন ২ মাস আগে। লাইসেন্স ডেলিভারি দেয়ার কথা ২১ জানুয়ারি। কিন্তু অফিসে এসে জানতে পারেন তার ডেলিভারির সময় আরো ৩ মাস বাড়িয়েছে। টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে না করায় হয়রানি বেড়েছে, এমন অভিযোগ তার।
সেলিম রেজা বলেন, জানুয়ারির ২১ তারিখে আমার স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখি আমার সময় দুই মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে পথে পথে হয়রানির শিকার হতে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত সেবাগ্রহীতা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছে বিআরটিএ অফিসে। কেউ রেজিস্ট্রেশন, কেউ মালিকানা পরিবর্তন আবার কেউবা গাড়ির ফিটনেস নিয়ে দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করছে এরুমে সেরুমে। সময়মতো হচ্ছে না কাজ, আবার রাস্তায় বের হলে উল্টো পড়তে হয় পুলিশী হয়রানিতে।
হয়রানির শিকার এক সেবাগ্রহীতা বলেন, তিন বছর পরে এসেও এখনো কাগজ পেলাম না।
আরেকজন জানান, এক রুমে গেলে আরেক রুম দেখিয়ে দেয়। সেখানে গেলে আরেক রুম দেখায়। সেখানে বলে ডেট বাড়িয়ে দেবে।
চালক মালিকদের অভিযোগ, দালাল ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে গেলে নানা অজুহাতে কাগজপত্র বাতিল করে দেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ জাতীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, আপনি যদি ওদের নির্দিষ্ট লোকের (দালাল) মাধ্যমে যান এবং ওদের নির্দিষ্ট ফি (ঘুষ) অফিসিয়াল খরচের বাইরে; দিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে ওরা দ্রুত কাজ করে দেবে।
চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে সরব উপস্থিতি রয়েছে বেশকিছু দালাল চক্রের। এমন এক চক্রের সদস্যের সাথে কথা বলতে চাইলে টিভির ক্যামেরা দেখে পালিয়ে যায় সে। তবে বিআরটিএ কর্মকর্তারা, দালালের উৎপাত বাড়ার জন্য সেবাগ্রহীতাদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম শাখার সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থি বলেন, গ্রাহকরা যদি আমাদের বিআরটিএতে নিজেরা সেবা নেয়ার জন্য আসে তাহলে অবশ্যই তারা ভোগান্তিতে পড়বে না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা দালালদের উৎপাত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।
হাটহাজারি উপজেলার বালুছড়া এলাকার বিআরটিএ কার্যালয়ে প্রতিদিন ১০-১২ ধরণের সেবা নিতে আসে পাঁচশ’র বেশি সেবাগ্রহীতা।