আইসিসি থেকে খায়রুল হকের মনোনয়ন প্রত্যাহার
দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট আইসিসি’র বিচারক নির্বাচন থেকে আচমকা সরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকার তরফে এক চিঠি পাঠিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র চিঠি পাঠানো এবং মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি গতকাল নিশ্চিত করেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে আইসিসি’র বিচারক হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তখন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে (তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী এবং নব্বই বছর বয়স্ক বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতাজনিত কারণে) প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সুনির্দিষ্টভাবে কী কারণ উল্লেখ করা হয় তার মনোনয়ন প্রত্যাহার সংক্রান্ত চিঠিতে সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য শেয়ারে রাজি হয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হেগে দায়িত্বপালনকারী (সাবেক) বাংলাদেশি এক কূটনীতিক অবশ্য মানবজমিনকে বলেছেন, এবারে বিচারপতি খায়রুল হকের মনোনয়নকে ঘিরে শুরু থেকেই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অপতৎপরতা ছিল দৃশ্যমান।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিশেষত সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিচারপতি খায়রুল হকের যুগান্তকারী রায়গুলোকে টেনে তার মনোনয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইসিসি রোম সংবিধি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর এবং অনুসমর্থনকারী জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গোপন ব্যালটে ভোটাভুটিতে আগামী ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে নতুন বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। ঢাকা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও ৯ বছর মেয়াদে নতুন করে ৬ জন বিচারক নিয়োগ করতে যাচ্ছে আইসিসি। বর্তমানে আইসিসিতে ১৮ জন বিচারক রয়েছে। যাদের মধ্যে ৬ জনের মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হবে। এই বিষয়ে নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের ১৫ই মে’র মধ্যে অ্যাসেম্বলি অফ স্টেট পার্টিজ (এএসপি)-এর মনোনয়নের সময়সীমা ছিল। এটা শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৬টি পদের বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে একজনসহ ২২ জন প্রার্থীর নাম জমা পড়েছিল। তবে বিচারপতি হকের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকে আরো বেশ ক’জনের সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে চূড়ান্ত পর্বে যারা বহাল থাকবেন তাদের মধ্যে আগামী ৭ এবং ১৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় অ্যাসেম্বলি অফ স্টেটসের ১৯তম অধিবেশনে ভোট হবে। সেই অধিবেশনেই তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। ক্রিমিনাল কোর্টের কার্যক্রম রোম সংবিধির দ্বারা পরিচালিত।
এই সংবিধির ৬৩ (৩) অনুচ্ছেদ বলেছে, বিচারকের নিয়োগ হতে হবে এমন সব ব্যক্তির মধ্য থেকে যাদের রয়েছে উচ্চ নৈতিক চরিত্র, নিরপেক্ষ, সৎ এবং দৃঢ়চিত্ত। যারা তাদের নিজ দেশে সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের যোগ্যতার শর্তাবলী পূরণ করেন।
রোম সংবিধি অনুযায়ী বিচারকরা কেবলই একবারের মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেন। তাদের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উইকিপিডিয়া বলেছে, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (জন্ম: ১৮ই মে ১৯৪৪) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ এবং ১৯তম প্রধান বিচারপতি।