নিউজ ডেস্ক..
নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি। কিন্তু দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন প্রাপ্তির খবর প্রচার করে নেতাকর্মীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণও করছে।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলায়) আসনে দুই দিন ধরে চলেছে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের সমর্থকদের মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল। তিনি আবারো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন দলীয় সভানেত্রীর স্বারিত এমন চিঠিও নাকি তাদের হাতে পৌঁছেছে। সেই সুবাদে এমপির কর্মীরা নিজ দলের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীর কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়ক মুহ. আবদুল হান্নান খানের সমর্থকেরাও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠ চাঙ্গা রাখতে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে মিছিল সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে তার সমর্থকেরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে সাবেক এমপি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে এমন খবরে তার সমর্থকেরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন। এলাকায় আনন্দ মিছিল করে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর) আসনে একবার খবর আসে দলের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ মনোনয়ন পাচ্ছেন। কখনো খবর আসে বিএমএ নেতা ডা: এহসানুল হক জগলুল মনোনয়ন পাচ্ছেন। আবার পাল্টা খবর আসে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ আলী খোকন মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। এই তিন প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দ উল্লাসের এমন নানা খবরের মধ্যেই সর্বশেষ খবর হচ্ছে, আসনটি জাতীয় পার্টিকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও তা নিয়ে নিয়ে নানা ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকেরা। শুধু তা-ই নয়, দলের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীর সমর্থকদের হুমকি প্রদান ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টিকে মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত মনোনয়নের ব্যাপারে কাউকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ নয়, কিছু মিডিয়া তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। এর দায়-দায়িত্ব তাদের। জোটের সাথে আসন চূড়ান্ত করে কয়েক দিনের মধ্যে তালিকা ঘোষণা করা হবে।’
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এসব আসনে প্রার্থীদের ওপর পরিচালিত একাধিক জরিপের ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই সেট খসড়া তালিকা আগেই করে রেখেছেন। এর মধ্যে বিএনপি জোট নির্বাচনে এলে এক সেট এবং বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলে আরেক সেট। এখন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ওই দুই সেট সামনে নিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগির সুরাহা না হওয়ায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারছে না আওয়ামী লীগ।
নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের দু’জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রায় সব আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। আর বোর্ডের কোনো কোনো সদস্যের মারফতে সেই খবর কিছু মিডিয়া এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছেও চলে যাচ্ছেন। এসব খবর জেনেই তাদের সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করছে। তবে কোনো কোনো আসনে খবর ছড়িয়ে পড়লে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এসব আসন নিয়ে নতুন করে আবারো চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সূত্রগুলো বলছে, সরকারের শরিক ১৪ দল ও মহাজোটের সাথে আসন বণ্টন নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। শরিকদের আসন চাহিদা দেখে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন দলের নীতি-নির্ধারকেরা। সে জন্যই প্রার্থী ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। তবে ২-৩ দিনের মধ্যেই এ তালিকা ঘোষণা করা হতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান বলেন, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে কাউকে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। অনেক আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও তার ওপর ঘষামাজার জন্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর একক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে সংযোজন বা বিয়োজন করতে পারবেন। আর নির্বাচন কমিশনের তফসিলের কারণে আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।’