আগামী নির্বাচনেে কোন কিছুই নিশ্চিত নয় – লয়েড গ্রিন

167

ডেস্ক রিপোর্ট :

ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে। ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে অবস্থিত দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
উত্তাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেড়ে উঠা, দারিদ্র্য হ্রাস ও নারী ক্ষমতায়নে সক্ষম হয়েছে। এ বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যেমনটা বলেছে, ‘একটি নিম্ন-আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
হ্যাঁ, জোয়ারে সব নৌকাই সামনে যায়। যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন জানেন না, তাদের জন্য বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ১০ বছরে গড়ে ৬ শতাংশ হারে বেড়েছে। এ বছর ও আগামী বছরের মধ্যে ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
অপরদিকে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশের আশেপাশে। ১৯৯১ সালে এই হার ছিল ৪৫ শতাংশ। ৮ বছর আগেও এই হার ১৮ শতাংশ বেশি ছিল।

সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৭৫ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে তা ১৭০ কোটি ডলার। অর্থাৎ দ্বিগুনেরও বেশি।
এই সাফল্যের নেপথ্যে কী আছে? অর্থনীতিবিদরা বলতে চান, মানুষ খরচ করা বাড়িয়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা বিস্তৃত হয়েছে। এক দিক থেকে চিন্তা করলে, আধুনিকতা জেকে বসেছে। আর বাংলাদেশীরাও স্রোতে তাল মিলিয়েছে।
এছাড়া, কৃষিখাতও অর্থনীতিকে আর অতো নিয়ন্ত্রণ করে না। উৎপাদন ও সেবা খাত এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। চীনের পর বিশ্বের তৈরি পোশাক বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের সমাহার দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের দোকানগুলোর তাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে সরকারের নেতৃত্বে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিস্তৃতি ঠেকিয়েছে। তা-ও এমন একটি দেশে যেখানে মুসলিমদের হার অত্যধিক বেশি। যে-ই দেশটি কিনা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম দেশ।
নারী শিক্ষা ও তাদেরকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে জোর নজর দিয়েছেন হাসিনা। জনস্বাস্থ্যও অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশে এখন সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল ৭২ বছর। ভারতে যা ৬৮ ও পাকিস্তানে ৬৬।
সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারী সংস্থাগুলোও এজন্য কৃতিত্বের দাবিদার। জনসম্পৃক্ততাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্জন যে কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হলো ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ জনপ্রতি খরচ করে কম।
আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের একটি জরিপে দেখা যায়, ৫ জনের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশীই মনে করেন দেশ সঠিক পথে রয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট প্রতি ১০ জনের ৭ জন। এই দিক থেকে চিন্তা করলে, প্রধানমন্ত্রী ও তার ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের ফের ক্ষমতায় আসার জোরালো সম্ভাবনা থাকার কথা। কিন্তু, আসছে নির্বাচনে কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বর্জন করলেও আগামী নির্বাচনে সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিরোধী দলগুলো সম্ভবত লড়বে। আইআরআই’র ওই জরিপেই দেখা গেছে গণতন্ত্র নিয়ে জনসন্তুষ্টি কমেছে।
দেশের দারুণ অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত সত্ত্বেও, এই গ্রীষ্মেই দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। সরকারের যদিও ব্যাক-আপ ছিল। এছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির প্রতি আস্থা সামগ্রিকভাবে কমেছে, যেখানে কিনা মানুষজন ঐতিহাসিকভাবেই গণতন্ত্রকামী। ১৯৯১ সালে ১৬ বছরের সামরিক শাসন ছুড়ে ফেলেছে মানুষ।
মানুষের জীবনযাত্রার মান যত বাড়বে, তাদের মধ্যে বর্ধিত স্বাধীনতা, সুশাসন ও উন্নত জীবনের চাহিদাও তত বাড়বে। ফ্রিডম হাউজের মতে, বাংলাদেশ এখন ‘আংশিক মুক্ত’ দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান, নেপাল ও মালয়েশিয়া। ফলশ্রুতিতে, যারাই আগামী নির্বাচনে জিতবে তাদেরকেই এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আর বিশ্বও সব কিছুর দিকে নজর রাখবে। প্রধানমন্ত্রী পুনর্নিবাচিত হওয়ার আর্জি জানাবেন। কিন্তু নির্বাচন হলেই উদারীকরণের চাহিদা শেষ হবে না। নিজের দাবিকে তুলে ধরার নিজস্ব পন্থা আছে স্বাধীনতার।
(লয়েড গ্রিন একজন মার্কিন আইনজীবী। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের ১৯৮৮ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে মিডল ইস্ট পলিসি গ্রুপের স্টাফ সেক্রেটারি ছিলেন। এছাড়া ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত মার্কিন বিচার বিভাগে কাজ করেছেন। তার এই নিবন্ধ এশিয়া টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here