করোনার প্রভাবে মিরসরাইয়ে কর্মহীন শ্রমজীবি মানুষ

258

নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনায় মিরসরাই উপজেলা এখন অনেকটাই ‘লকডাউনে’। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে হাট-বাজারসহ কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষগুলো। পাল্টে গেছে শ্রমজীবী মানুষের জীবনচিত্র।
উপজেলার অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবি ও কৃষিজীবী। এসব মানুষ দৈনন্দিন শ্রমেই সংসার চালায়। করোনাভাইরাসের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা, দোকানপাট, হাট-বাজারসহ মানুষের জীবিকা ও আয় রোজগারের পথ বন্ধ রয়েছে। তাদের গৃহবন্দি জীবন যেন অভাব ও অনিশ্চয়তার ফাঁদ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় কর্মহীন রয়েছেন মৎস্যজীবীরাও। গরুর খামারিরা দুধ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। মাঠে নষ্ট হচ্ছে কৃষকদের ফসল।
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার নির্মাণ আবু বক্কর বলেন, ‘পাঁচরদিন ধরে নির্মাণ কাজের উপকরণের সকল দোকান বন্ধ, বাড়ির মালিক ও ঠিকাদাররা নির্মাণ সামগ্রী যোগান দিতে না পারায় নির্মাণকাজও বন্ধ। বেকার হয়ে পড়েছে নির্মাণ শ্রমিকরা।’
কথা হয় রিক্সাচালক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। আজ সকাল ৯টায় রিক্সা নিয়ে বের হলাম এখন ৩টা বেজে গেছে, মাত্র ৭০ টাকা ভাড়া পেলাম। আগে এই সময়ের মধ্যে ৪০০/৫০০ টাকা হয়ে যেত। অবস্থা খুবই খারাপ। করোনার কারণে মানুষ বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছে না। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি।’
ব্যাটারিচালিত রিক্সার চালক মো. সেকান্দার হোসেন বলেন, ‘পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই। আগে ৭ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার করতাম। এখন করোনা আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। আমার মতো আরও অনেকে আছে যারা সারাদিন বসে আছে। কীভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছিনা।’
দিনমজুর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে কাজকর্ম বন্ধ। ঘরে তেমন কিছু নেই। সরকারিভাবে কিছু না পেলে না খেয়ে থাকতে হবে’
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমজীবি কর্মহীন মানুষকে সহযোগীতা করা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে রিক্সা চালক, টেক্সি চালক সহ অসহায় মানুষদের খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কর্মহীন ও অসহায় মানুষর পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘রাস্তায় অনেক সিএনজি ও রিক্সা চলাচল করছে। কিন্তু যাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে এ রকম পেলে আমাদের খবর দিবেন। আমরা তাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিরসরাই দুই পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে অসহায়দের তালিকা করেছি। খুব শীঘ্রই তাদেরকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here