খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় রাখা হয়েছে : রিজভী

220

 


নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাত-পায়ের যন্ত্রণায় ভুগছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার পরিবারের লোকেরা গতকাল দেখা করতে গিয়ে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখে স্বজনেরা ব্যথিত হয়েছেন। স্বজনদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাহীন অবস্থায় রাখা হয়েছে। বাম হাত-পা, হাতের আঙ্গুল নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। ফিজিওথেরাপিও একরকম বন্ধই করে দেয়া হয়েছে। তাঁর জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফিজিওথেরাপিষ্ট ব্যবস্থা করা হয়নি।

আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রীকে গভীর স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে রাখাটাই যেন সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ জন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র কব্জা করে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এটা আইনী লেবাসে প্রতিহিংসা পূরণের নমুনা। আমি আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পছন্দানুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে তড়িৎ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশনেত্রীর স্বজনরা সাক্ষাৎ শেষে আমাকে জানিয়েছেন- গত রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভা সফল করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকাবাসী, বৃহত্তর ঢাকা জেলাসহ সারাদেশের জনগণের মধ্যে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগরী (উত্তর-দক্ষিণ), বৃহত্তর ঢাকা জেলা বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে গণমাধ্যমের যেসমস্ত সাংবাদিক জনসভা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন তাদেরকেও বিএনপি চেয়ারপারসন আন্তুরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। জনসভা চলাকালে ফরিদপুর নগরকান্দার ফুলসুতি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান মাতুব্বর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকে ম্রিয়মান পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

রিজভী বলেন, এইচ টি ইমাম নামে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা যিনি সরকারের গোপন পরিকল্পনা মাঝে মাঝে প্রকাশ করে দেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে তিনি কিভাবে বাছাই করা প্রশাসনের লোকদের দিয়ে ভোট কেন্দ্রগুলো নিজেদের আয়ত্বে রাখবেন সেটিও পরবর্তিতে প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী সরকারের অনাচারমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশদাতা এই এইচ টি ইমাম কিভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই বিসিএস-এ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশ করানোর পরিকল্পনা করেছিলেন সেটিও একটি সভায় ফাঁস করেছেন। এখন তিনি গায়েবী পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধিকর্তা সেজেছেন মুজিব হত্যাকারীদের সহযোগী, এই সাবেক আমলাটি। তিনি বলেছেন-আওয়ামী লীগের ভোট নাকি ৪২ শতাংশ, আর বিএনপির নাকি ৩০ শতাংশ। এসব উদ্ভট পরিসংখ্যান এইচটি ইমামের নিজস্ব নাকি তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টার তা জাতির জানার আগ্রহ আছে। কারণ এহেন অলৌকিক পরিসংখ্যান এইচ টি ইমাম সাহেবের মাথা থেকে আসাটা যৌক্তিক এই কারণে যে, খন্দকার মোশতাকের সহযোগী হিসেবে কাজ করার জন্য বিব্রতকর অবস্থা কাটাতে এখন প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে মোসাহেবদের ম্যারাথন দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চান। তবে প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিৎ যারা ‘হুজুরের কথায় অমতকার’ বলে মোসাহেবী করেন তারা বিপজ্জনক। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদেরকে আক্রমণাত্মক হতে হবে বলেছেন, যা শুধু নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী নয়, বরং আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদেরকে সন্ত্রাসী হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে উস্কানি দেয়ার শামিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনটি যে ভোটার ছাড়াই হবে এইচ টি ইমামের বক্তব্য সেটিরই পূর্বাভাস। এইচ টি ইমাম এখন আওয়ামী সরকারের ‘রাসপুটিন’ হিসেবে কাজ করছেন – সেজন্যই আওয়ামী লীগ এখন গণবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দল।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- পুলিশের কাছে নাকি তথ্য আছে বিএনপি আন্দোলনের নামে নাশকতার ছক আঁকছে। সেজন্যই হাতিরঝিল থানায় বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা হয়েছে। আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই- আপনাদের মতো আপনাদের পুলিশরাও এখন গায়েবী তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। আপনাদের পুলিশ এমনই যে, ঐ মামলায় বর্ণিত ভাংচুর হওয়া গাড়ির নম্বর জানে না। এছাড়াও সম্প্রতি দায়ের করা অনেক মামলায় দুই বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতার নামেও মামলা দেয়া হয়েছে, হজে থাকাকালীন অবস্থায়ও মামলা দেয়া হয়, হাসপাতালে শায়িত ৮৩ বছর বয়স্ক বিএনপি নেতার নামে এবং বিদেশে থাকলেও মামলা দেয়া হয়। পুলিশ বলেছে- মগবাজারে ঘটনা ঘটেছে, অথচ সাংবাদিকরা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, ঐ এলাকায় গাড়ি ভাংচুর বা ককটেল বিস্ফোরণের কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা পায়নি। এমনকি ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও গাড়ি ভাংচুর বা ককটেল বিস্ফোরণের কথা জানে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছে। এমন ‘খয়ের খাঁ’ পুলিশ এখন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় না, আওয়ামী লীগ চায় আনুগত্যতন্ত্র। সেজন্য আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর একনিষ্ঠ অনুগত পুলিশ দেশজুড়ে গ্রেফতার আর মামলার জাল বিছিয়ে বিরোধী কন্ঠস্বর নীরব রাখতে চাচ্ছে। বর্তমানে দেশজুড়ে গোরস্থানের নীরবতা আর কবরের ভিতরের অন্ধকারের শান্তিতে ক্ষমতাসীনরা উৎফুল্ল, উল্লসিত। এজন্য বাংলাদেশে ওবায়দুল কাদেরদের ভোটারবিহীন গণতন্ত্রের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে পুলিশ বিএনপিসহ বিরোধী দলকে খতম করতে লাগামছাড়া অভিযান চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ফেনী জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন দুলাল এর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সন্ত্রাসীদের এই বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। গুরুতর আহত আমির হোসেন দুলাল এর আশু সুস্থতা কামনা করছি।

রিজভী জানান, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত বিএনপির শান্তিপূর্ণ জনসভা শেষে নরসিংদী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আফসার উদ্দিন দেওয়ান, মো: শামীম, মো: সানি, মো: রাজিব, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলী আহমদ, মো: সোহেল, আমির হোসেন, মো: রুবেল, মো: সোহেল-২, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো: আল আমিন, ফয়সাল, রুবেল, আরিফ, কাওছার, মো: বিল্লাল, মো: মিরাজ, মো: রাকীব, মো: সৌরভ, মো: রকি, আরমান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কামাল আহমেদ, মো: সবুজ, গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো: শ্যামল এবং গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো: রাসেলসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তিনি আরো জানান, এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম, মো: রনি, মো: শুভ, আলম, টিটু, সিরাজুল, সেন্টু, হারুনুর রশীদ হারুন, লিটন, গিয়াস উদ্দিন, রাসেল, কবির, জসিম, পারভেজ, জাহাঙ্গীর, সালাহউদ্দিন, মন্টু, দ্বীন ইসলাম, রিপনসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহীর গুজিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমকে গতরাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা ছাত্রদলের সদস্য হাবিবুর রহমান শান্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here