গুজবের বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর সতর্কবাণী

340

 

মানুষের মধ্যে ওয়াস ওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দেয়ার জন্য সবসময় শয়তান লেগে আছে। এই শয়তান দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর শয়তান আছে, যারা ‘জিন’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং অপর শ্রেণীর শয়তান মানুষেরই এক সম্প্রদায়। এই উভয় শ্রেণীকে পবিত্র কোরআন ‘শায়তানুল ইনছে ওয়াল জিন্নে’ বলে আখ্যায়িত করেছে। শয়তান যে কোনো আকার-রূপ ধারণ করতে পারে, এই শক্তি আল্লাহ তাকে দিয়েছেন। কোরআনের ভাষায় ‘হিজবুশ শায়তান’ বা শয়তানের দলকে মানবের চর্ম চোখে স্বাভাবিকভাবে অবলোকন করা না গেলেও তাদের আচরণ ও কার্যকলাপ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা ও পরিচয় রয়েছে। প্রকৃত মুসলমান মাত্রই শয়তানি কার্যকলাপ অনুধাবন করতে পারেন। মানব শয়তান যেহেতু কোনো অদৃশ্য শক্তি নয়, তাই তাদের পরিচয় শয়তানি কার্যকলাপের মাধ্যমে পাওয়া যায়। মোনাফেকি আচরণ হলো তাদের অন্যতম পরিচয় ও লক্ষণ। এরূপ লোকেরা সাধারণ মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করে থাকে। সরল জনসাধারণের মধ্যে মিথ্যা বা কল্প-কাহিনী প্রচারের মাধ্যমে শয়তানি ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে, কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে নানা গুজব রটনা ও অলিক কথাবার্তা প্রচার করে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায় এবং এতে তারা তৃপ্তি লাভ করলেও সমাজের নানা ক্ষতি সাধিত হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘নিশ্চই সে সকল মোমেন সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেরা নামাজে অনুনয়-বিনয় ও আল্লাহকে ভয় করে এবং যারাফজুল ও বেহুদা কথাবার্তা হতে বিরত থাকে।’ কোনো বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু জানা না থাকলে আন্দাজে তা না বলার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দান করেছেন। সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত বিশ্বাস নেই আন্দাজে তা প্রচার করো না। কেননা চোখ, কান ও অন্তর এসমস্তরই জবাবদিহিতা করতে হবে।’ এ সকল আয়াত হতে ভিত্তিহীন প্রচারণা ও গুজব রটানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের প্রায়োজনীয়তার কথা সহজে অনুমান করা য়ায়। নির্ভযোগ্য সূত্র ছাড়া এরূপ কোনো খবর কেউ প্রচার করলে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘হে মুসলমানগণ! যদি কোনো ফাসেক, মন্দ লোক কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই-পরীক্ষা করে দেখবে যেন অজ্ঞতাবশত: কোনো জাতির উপর আক্রমণ করা না হয়। এরূপ কাজ করলে তোমাদেরকে নিজেদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতাপ করতে হবে’। অর্থাৎ ফাসেক বা মন্দ লোকের খবর ততক্ষণ বিশ্বাসযোগ্য না, যতক্ষণ তা প্রমাণিত না হবে। কোরআনের এই সুনীতির অনুসরণ করা হলে গুজব রটনা বা মিথ্যা প্রচারণায় কোনো মুসলমান বিভ্রান্ত হতে পারে না। মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান ও বিশ্বাস না করার যে খানে উপদেশ দেয়া হয়েছে এবং মিথ্যা প্রচারের কুফল বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে ন্যায় ও সত্য অনুসরণ এবং তাতে কোনো প্রকারের সংশয় না করারও আদেশ দেয়া হয়েছে। সন্দেহ এবং সংশয়ের বিষয়গুলো হতে বিরত থাকার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য এবং ভুল ও নির্ভুল বিষয় যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি নির্ধারণ করতে পারে। মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করা এবং তা প্রচার করা যেরূপ পাপ, সত্য ও ন্যায় সম্পর্কে সংশয় বোধ করাও তেমনি অপরাধ। সূরা হুজরাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মোমেনগণ! অধিক সংশয় বোধ হতে বিরত থাকো। কেননা কোনো কোনো সংশয় পাপকার্যের অন্তুর্ভুক্ত।’ এতে প্রমাণিত হয় যে, যারা মুসলমানদেরকে সংশয়গ্রস্ত করে তোলে, তারা বড় পাপী। হাদিস শরীফে সংশয় সৃষ্টিকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত আবু হোরায়রা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত; নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সত্য সম্পর্কে তোমরা সংশয় সৃষ্টি হতে বেঁচে থাকো। কেননা সংশয় সৃষ্টি মিথ্যা কথা স্বরূপ।’ একই বর্ণনায় সুফিয়ান বলেন, ‘সংশয় দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের সংশয়ে পাপ হয়। আর এক প্রকারের সংশয়ে পাপ হয় না। যাতে পাপ হয় তা হচ্ছে এই যে, সংশয় মনে করা সত্ত্বেও তা বলা বা প্রচার করা এবং যে প্রকারের সংশয়ে কোনো পাপ হয় না তা হলো এই যে, সংশয় সৃষ্টি হলে তা না বলা কিংবা প্রচার না করা। (তিরমিজি)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের আকার ধারণ করে লোকের কাছে আসে এবং তাদের মধ্যে মিথ্যা কথা প্রচার করে। ফলে তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্য হতে কোনো লোক বলে ওঠে যে, আমি এক ব্যক্তির কাছে এরূপ বলতে শুনেছি, তার চেহারা দেখলে চিনি, কিন্তু তার নাম বলতে পারি না।’ (মুসলিম) মিথ্যা প্রচার ও গুজব রটনা সম্পর্কে হজরতের এই স্পষ্ট উক্তিটি বিচার-বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, গুজব রটনাকারীরা এই শয়তানি নীতিরই অনুসরণ করে থাকে।
সুতরাং, গুজবে কান না দেয়া, গুজবে বিশ্বাস না করা। আর যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন, প্রচার ও প্রকাশ করা প্রত্যেকের দায়িত্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here