
চট্টগ্রামে এখনো মোটা দাগে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়নি। অথচ এরই মধ্যে অন্তত এক ডজন যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এসব নেতারা হলেন- যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, তার প্রধান সহযোগী জাফর আলম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহীদুল ইসলাম শামীম, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আ ম ম মহিউদ্দিন, চান্দগাঁও এলাকার এসরারুল হক ও বায়েজিদ এলাকার দিদারুল আলম ওরফে লম্বা দিদার। এদের মধ্যে বাবর ও এসরারুল দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
র্যাব ৭-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। র্যাব সদস্যরা ইতিমধ্যে চকবাজার এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বাসা থেকে দ্ধার করেছে গুলিসহ বিদেশি পিস্তল। টিনু নগর রাজনীতিতে সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আত্মগোপনে যাওয়া নেতাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর ২০১৩ সালে রেলওয়ে সিআরবির জোড়া খুনসহ একাধিক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। ঢাকার জিকে শামীমের মতো চট্টগ্রামে বাবরও সশস্ত্র পাহারাবেষ্টিত হয়ে চলাচল করতেন। এমনকি বাবরের স্ত্রীর জন্যও বন্দুকধারী পাহারাদার ছিল। জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি আত্মগোপন করেন।
পরে পালিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে আত্মগোপন করেছেন বাবরের প্রধান সহযোগী জাফর আলম, দ্বিতীয় সহযোগী আক্তার মাস্টার, তিন সশস্ত্র পাহারাদার বিশ্বজিৎ, আলতাফ ও রিয়াজ। বাবর গত এক দশক ধরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সব ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন।
বাবরের মতো নিজস্ব বন্দুকধারী পাহারাদার নিয়ে চলাফেরা করতেন নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহীদুল ইসলাম শামীমও। ঢাকার জিকে শামীম গ্রেপ্তারের পর এই শামীমও আত্মগোপনে চলে যান। শামীমও রেলওয়ের ঠিকাদার। তার নামে রেলওয়ের কাজ জোর করে কাজ বাগিয়ে নেওয়াসহ রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি দৃশ্যপটে আসেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আ ম ম মহিউদ্দিন। অন্যদিকে খুন হন পলিটেকনিক এলাকার শিল্প কারখানার নিয়ন্ত্রক মেহেদী হাসান বাদল। ফলে মেহেদীর শূন্য জায়গায় নিয়ন্ত্রণ নেন মহিউদ্দিন। রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। জানা যায়, এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখতে তিনি নিহত যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদলের স্ত্রীকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতেন। পরে তাও বন্ধ করে দেন। গতকাল শুক্রবার ফোন করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মহিউদ্দিনের একাধিক ঘনিষ্ঠজনকেও ফোন করা হয়। তারাও কেউ ফোন ধরেননি।
নগরীর বায়েজিদ এলাকার দিদারুল আলম ওরফে লম্বা দিদারের বিরুদ্ধে রয়েছে যুবলীগ নেতা পরিচয়ে সরকারি জমি দখল ও শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ। তিনিও পলাতক বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
চান্দগাঁও এলাকার স্বেচ্ছাসেবক নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন এসরারুল হক। চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং দিয়ে ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে গত এক দশকে শূন্য থেকে বিত্তশালী বনে যান তিনি। চড়েন দামি গাড়িতে। চলমান অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
