বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে শাহাদাতবরণ করেন তিনি। শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ১২ দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দলের সকল অঙ্গ সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করছে মুক্তিযুুদ্ধের জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে।
মহামারীর প্রেক্ষাপটে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভাসহ ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বুধবারে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ঘোষিত কর্মসূচিসমূহ অনুযায়ী, আজ ৩০শে মে সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় ঢাকায় শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শুধু মাত্র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুস্পমাল্য অর্পণে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিকাল সাড়ে তিনটায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাতার স্মরণে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং ১লা জুন থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ডের ওপরে বিষয়ভিত্তিক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। এতে দেশের কয়েকজন বরণ্যে বুদ্ধিজীবী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বক্তব্য রাখবেন বলে জানান মহাসচিব।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভার বিষয়গুলো হচ্ছে, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ ও শহীদ জিয়া’, ‘গণতন্ত্র, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বিএনপি’, ‘শহীদ জিয়া ও উৎপাদন-উন্নয়নের রাজনীতি’, ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও অর্থনৈতিক সংস্কার’, ‘শহীদ জিয়ার কৃষি বিপ্লব’, ‘নারী ক্ষমতায় ও শিশু কল্যাণ’, ‘কর্মসংস্থান ও শ্রমিক কল্যাণ’, ‘শিক্ষা ও গণশিক্ষা’, ‘পল্লী বিদ্যুত ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন’, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ’, ‘শহীদ জিয়ার বিদেশনীতি’ এবং ‘শহীদ জিয়ার যুব উন্নয়ন্থ।
প্রতিবছর জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুঃস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হলেও এবার প্রস্তুত করা খাদ্যের পরিবর্তে খাদ্য সামগ্রি, বন্ত্র বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান মহাসচিব।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, কেভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা কোনো সমাবেশের মধ্য দিয়ে কোনো জমায়েত করে প্রতিবছরের মতো দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে শাহাদাত বার্ষিকী তা পালন করা সম্ভব হবে না।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কোনো সমাবেশ বা জমায়েত না করে ভার্চুয়াল ডিসকাশন, ভার্চুয়াল মিটিং করে আমরা তাকে স্মরণ করবো। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের একটা পরিচিত দিয়েছিলেন এবং তারা যে একটা স্বাধীন স্বয়ং সম্পূর্ণ জাতি সেই স্বপ্ন তৈরি করেছিলেন তিনি, মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন অল্পসময়ের মধ্যে। আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। তার শৈশবের কিছুদিন কাটে বগুড়া ও কলকাতায়। ভারত বিভাগের পর রসায়নবিদ পিতার বদলির সুবাদে তিনি করাচি যান। করাচির একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাহোর সীমান্তের খেমকারান সেক্টরে ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি। বিএনপির দাবি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর তার নেতৃত্বে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধকালে প্রথমে তিনি সেক্টর কমান্ডার ও পরে তার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫শে আগস্ট নিযুক্ত হন চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করলে ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-বিএনপি।