মঈন উদ্দিন খান..
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি সমাবেশ করবে ৩০ সেপ্টেম্বর রোববার। আজ শুক্রবার নতুন এই তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। ৩০ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে একটি চিঠিও গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ বরাবর পাঠিয়েছে দলটি। জানা গেছে, বিএনপির এই সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন সামনে রেখে দলের সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা। সমাবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বশর্ত হিসেবে ৭ দফা দাবি দেয়া হবে। বিএনপির হাইকমান্ড গত একসপ্তাহ সিরিজ বৈঠক করে দাবিগুলো চূড়ান্ত করেছে। মনে করা হচ্ছে এটি সরকার পতন আন্দোলনের একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সমাবেশ থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের দাবি ও লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করব। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া ৫ দফা দাবি ও ৯ লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। আমরাও সমাবেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।
জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে ৭ দফা দাবিনামা তৈরি করেছে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. ক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, খ) বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ). নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।
৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাসাপেে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা।
৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা।
সাত দফা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ১২টি লক্ষ্য বাস্তবায়নের ঘোষণাও জনসভায় দেবে বিএনপি। এগুলো হচ্ছেÑ রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা। সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেতা নিশ্চিত করার ল্েয দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মতা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীকে আরো আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা। সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা। সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে বৈরিতা নয় এ মূলনীতি অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ বিনিয়োগ ইত্যাদি েেত্র আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদপে গ্রহণ করা। কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া, সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে, আয়বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।
জানা গেছে, সমাবেশে দলের এই ৭ দফা দাবি ও ১২ লক্ষ্য ঘোষণা করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে কোনো আলটিমেটাম দেয়া হবে না। সরকারকে এসব দাবি বাস্তবায়নে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে যেতে হবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। জানা গেছে, সমাবেশের পর থেকেই দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে পা রাখবে বিএনপি।
এক দিন পিছিয়ে সমাবেশ : জানা গেছে, গতকাল বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে জানতে ডিএমপিতে যান। এ সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের একটি সমাবেশের কথা জানিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর সমাবেশ না করার অনুরোধ জানান। পরে বিএনপি নেতারা ৩০ সেপ্টেম্বরের কথা বলেন। একটি লিখিত আবেদনও সেই পরিপ্রেক্ষিতে গতকালই পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আব্দুস সালাম আজাদ।
জানা গেছে, সমাবেশের অনুমতি মৌখিকভাবে পেয়ে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গ্রেফতার এড়িয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সমাবেশে অংশ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ দিকে সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে পুলিশি তল্লাশি চলছে। মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বাসায় গিয়ে প্রতি রাতেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
জোটের ঐক্য অুণœ রেখে বৃহত্তর ঐক্য
এ দিকে জোটের ঐক্য অুণœ রেখে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের পে মত দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে জোটের শরিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসে বিএনপি। বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গঠনের যে প্রক্রিয়া বিএনপি শুরু করেছে, তা সর্বশেষ কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
জোটের শরিকরা ঐক্যপ্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও জোটের ঐক্য অুণœ রাখার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজিলসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তের (একাংশ) মহিউদ্দীন ইকরাম, জমিয়তের (অপর অংশ) নূর হোসাইন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবদুর রকিব, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।