টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেল বাংলাদেশ

171
Bangladesh cricketer Mehidy Hasan (2nd L) celebrates with his teammates after the dismissal of the West Indies cricketer Devendra Bishoo (C) during the third day of the second Test cricket match between Bangladesh and West Indies at the Sher-e-Bangla National Cricket Stadium in Dhaka on December 2, 2018. (Photo by MUNIR UZ ZAMAN / AFP)

 

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে অনেক রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ। রোববার ইনিংস ও ১৮৪ রানে ক্যারিবীয়দের হারাল টাইগাররা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় জয়।
ফলে দুই টেস্টের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল সাকিবরা। এর আগে প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জিতে বাংলাদেশ।
আজ ম্যাচের তৃতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানে অল আউট করে দেয় টাইগাররা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অল আউট হয় ২১১ রানে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ৫০৮ রান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ তাদের প্রথম শুরু করেছিল ৫ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। কিন্তু বেশিক্ষণ তারা ক্রিজে থাকতে পারেনি। মধ্যাহ্ন বিরতির অনেক আগেই তারা গুঁড়িয়ে যায়। তারা প্রথম ইনিংসে খেলেছে মাত্র ৩৬.৪ ওভার।
তারা মোট ৩৯৭ রানে পিছিয়ে ছিল। এবার তাদেরকে ফলোঅনে ফেলে বাংলাদেশ। ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দলকে ফলো অনে ফেলল বাংলাদেশ।
আর তাতেও বাজিমাত। দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অল আউট হয় ২১৩ রানে।
দুই ইনিংসেই সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে তিনি নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। আর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট।

একটা সময় ছিল যখন টানা দুইবার ব্যাট করতে হতো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। অর্থাৎ প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহের কাছাকাছি যেতে কমপক্ষে দুই ইনিংস ব্যাট করতে হতো। তবে সেই ধারা অনেকটাই বদলে গেছে, টেস্ট ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বড় দলকে হারানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে বেশ কয়েকটি নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।

ইনিংস ব্যবধানে
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করে সাকিবরা।

পাহাড় সমান রানের সামনে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ১১১ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে রানে শেষ হয় ইনিংস।

প্রতিপক্ষকে প্রথমবার ফলোঅনে পাঠানো
চলতি ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো দলকে টানা দুই ইনিংসে ব্যাট করতে পাঠিয়েছে।

সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশর সামনে সুযোগ ছিল জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে দ্বিতীয়বার ব্যাট করানোর। কিন্তু ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫০৮ রান তোলে, অর্থাৎ ফলোঅন এড়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কমপক্ষে ৩০৮ রান তোলা প্রয়োজন ছিল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের প্রথম ইনিংসে ১১১ রানে গুটিয়ে যায়।

এরপর ফের ব্যাট করতে নামে ক্যারিবিয়ানরা।

প্রত্যেক ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে রান
টেস্ট ইতিহাসে কোনো ইনিংসে একটি দলের প্রতিটি ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেছে ১৪ বার। মানে ১১ জন ব্যাটসম্যানই কমপক্ষে ১০ রান তুলেছে।

এই ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশ করেছে গতকালই প্রথম।

বাংলাদেশ মোট ৫০৮ রান তোলে। যেখানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সেঞ্চুরি করেন এবং সাদমান ইসলাম অনিক, সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস করেন ফিফটি।

বাকিরা সবাই কমপক্ষে১০ রান তোলেন।

সবশেষ ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সব ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে রান করেন।

প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান বোল্ড আউট
ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। সাকিব আল হাসান দুটি ও মেহেদি মিরাজ তিনটি উইকেট নেন।

প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যানেরই বোল্ড হওয়া টেস্ট ক্রিকেট এর আগে দেখেছিল ১২৮ বছর আগে, ১৮৯০ সালে।

১৮৯০ সালে ওভাল টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেছিলেন দুই ইংলিশ পেসার ফ্রেড মার্টিন ও জর্জ লোম্যান।

এর আগে টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় টেস্টে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের প্রথম সাতজন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেছিল অস্ট্রেলিয়া।

অভিষেকে সবচেয়ে বেশি বল খেলা ওপেনিং ব্যাটসম্যান
এই টেস্টে অভিষেক হয়েছে সাদমান ইসলাম অনিকের। অভিষেক ইনিংসে রান করেছেন ৭৬। খেলেছেন ১৯৯ বল। অভিষেক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে এতা বল খেলেননি কোনো অভিষিক্ত ওপেনিং ব্যাটসম্যান।

টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বল খেলা ওপেনিং ব্যাটসম্যান ছিলেন নাজিমউদ্দিন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের সাথে ১৮৬ বল খেলে ৭৮ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তবে অভিষেক টেস্ট হলেও ওই ইনিংসটি ছিল নাজিউদ্দিনের দ্বিতীয় ইনিংস।

এই ইনিংস খেলতে সাদমান ২২০ মিনিট টিকে ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here