সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে গত দুই-তিন দিন ধরে বিপুলসংখ্যক অ্যাকাউন্টে প্রোফাইলের ছবি হিসেবে নিকষ কালো রঙ দেখা যাচ্ছে। জানা যায়, দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফেইসবুকের প্রোফাইল কালো হতে শুরু করে।
অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সকল নারী ফেইসবুক ব্যবহারকারীকে নিজের প্রোফাইলে চৌকোনা ‘কালো’ ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নারীদের ছাড়া পৃথিবী কেমন হবে তা দেখানোর জন্য এটি একটি আন্দোলন।
গত কয়েক দিনে এই বার্তার অনুসরণে অনেক নারীই তাদের ফেসবুক প্রোফাইল কালো করে দিয়েছেন। এই আহ্বানে সারা দিয়ে অনেক পুরুষও নিজের প্রোফাইলে ‘কালো’ ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি ব্যবহার করেছেন। উদ্দেশ্য নারী এবং কন্যাশিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতার প্রতিবাদ করা।
মূলত, নোয়াখালী বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এই ‘ফিমেল ব্ল্যাকআউট’ নামে এই প্রচারণাটি ছড়িয়ে পড়ে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সিলেটের এমসি কলেজে দলবদ্ধ ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণসহ সমস্ত ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ।
বিডি ফ্যাক্ট চেকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এইরকম কোনো আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি। ‘ফিমেল ব্ল্যাকআউট’ এর জন্য কালো ছবি দিতে আহ্বান জানিয়ে যে বার্তাটি পাঠানো হচ্ছে সেখানে বলা হচ্ছে- আগামীকাল সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ফিমেল ব্ল্যাকআউট।
এখানে সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখের উল্লেখ নাই। এ ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এই ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করেছে তারও কোনো উল্লেখ নাই বার্তাটিতে।
লিগ অব উইমেন ভোটারস এডুকেশন ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টি অ্যালিসন কাপিন এই বার্তাটিকে স্পাম বলে উল্লেখ করেছেন।অনলাইনে এই বার্তাটির উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই অস্ট্রেলিয়াতে ‘ব্ল্যাকআউট ফর উইমেন’ নামক একটি কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। রেড হার্ট ক্যাম্পেইন নামক একটি সংস্থা ঘরোয়া সহিংসতার শিকার নারীদের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করেছিল।
তবে, উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনায় নাগরিকদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রোফাইল কালো করে ওই সব ঘটনার বিচারের দাবি জানাতে এই ‘ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ শামিল হয়েছেন