ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার স্কুলছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

200

 

নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ শেষে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া স্কুলছাত্রীর জীবিত প্রত্যাবর্তনের ঘটনায় প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নির্দেশ আজ সোমবার দুপুরে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সদস্যরা হলেন- এডিশনাল এসপি (ডিবি), এএসপি ট্রাফিক ও ডিআইও ওয়ান।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, স্কুলছাত্রীর ঘটনায় সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং পুরো প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে কিভাবে আসামিদের গ্রেফতার সবকিছু সম্পর্কে তদন্ত করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত করে আমরা তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে এর প্রকৃত সত্য তা বের করে আনব। পুলিশের কাজ এটাই যে মানুষকে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা জানানো।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে গণধর্ষণের পর হত্যা করে স্কুলছাত্রীর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছিল বলে তিন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। এর ১৪ দিন এবং নিখোঁজের ৪৯ দিন পর সুস্থ অবস্থায় জীবত ফিরে এসেছে দিসা মনি নামের ওই স্কুল ছাত্রী। তিন আসামি এখনো নারায়ণগঞ্জ কারাগারে জেল খাটছেন।

রোববার বিকেলে বন্দর থানার নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে দিসা মনিকে তার মা বাবা উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করলে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।

দিসা মনি জানান, সে নিজে প্রেম করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তারা বন্দরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছিল।

দিসার মা রেখা আক্তার জানান, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকা ইকবাল নামে একটি ছেলে সাথে গত দেড় মাস ছিলো জিসা। দিসাকে বিয়ে করে তারা সেখানে ছিলো বলে জানান তিনি।

গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিসা মনি (১৩)। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজ জিডি করেন রেখা আক্তার।

৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। মামলায় জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেন, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে ওই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এরপর থেকেই আমার মেয়ের কোনো খোঁজ নেই।

মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ দিসার সাথে যোগাযোগ করত। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানাণ, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিসাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।

আসামিদের বরাত দিয়ে ওই সময় পুলিশ জানায়, স্বীকারোক্তি দিয়েছে দিসা হত্যামামলার ৩ আসামি আব্দুল্লাহ, রকিব ও খলিলুর রহমান। আদালতের নির্দেশে তারা এখন জেলখানায় বন্দী।

বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আটক করা হয় অটোরিক্সা চালক রকিবকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয় থানায়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ আগস্ট অপহরণ মামলা রুজু হয় থানায়। অতঃপর আটক করা হয় আব্দুল্লাহকে। এরপর রকিব ও আব্দুল্লাহকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়।

এরপর নতুন তথ্য পাওয়া যায় আব্দুল্লাহর কাছ থেকে। ইস্পাহানী ঘাট থেকে জিসাকে নিয়ে আব্দুল্লাহ একটি ছোট বৈঠা চালিত নৌকা ভাড়া করেছিল রাত অনুমানিক নয়টায়। ১২টার মধ্যে দিসাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল শীতলক্ষ্যাতে, সাহায্য করেছিলো মাঝি খলিল।

তাদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, মোবাইলে কথা হতো আব্দুল্লাহর। আর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রাত নয়টায় ইস্পাহানী ঘাটে যায় তারা। রকিব তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় আব্দুল্লাহ ঝাঁপিয়ে পড়ে দিসার উপর। নিজেকে রক্ষা করতে প্রাণপণে চেষ্টা করে দিসা, পেরে ওঠে না আব্দুল্লাহ। সাহায্য করে মাঝি খলিল। তারপর রক্তাক্ত দেহ আবার ধর্ষণ করে মাঝি খলিল। যন্ত্রণায় কাতর দিসা শুধু বলে বাড়িতে গিয়ে সব বলে দিবে, ভয় পেয়ে যায় ধর্ষকরা। দিসার গলা টিপে ধরে আব্দুল্লাহ আর পা চেপে রাখে খলিল। একসময় নিস্তেজ হয়ে যায় দিসার দেহ। স্রোতাস্বিনী শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয় দিসা’র লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

দিসা উদ্ধারের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তবে এর আগে গ্রেফতারকৃত তিনজনের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here