ক্ষমা চেয়েও শেষ রক্ষা হলো না নগর মহিলা দলের সভাপতি ও কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি’র। শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বক্তব্যের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত বলে উল্লেখ করলেও সন্ধ্যায় কেন্দ্র থেকে তার বহিষ্কারাদেশে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। একই স্বাক্ষরে বলা হয়েছে নগর মহিলা দলের সভাপতি পদে তার স্থলে দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র সহ সভাপতি ফাতেমা বাদশা।
বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মহিলা দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন থেকে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাতেমা বাদশা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেব দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রসঙ্গত, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে আবারো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে দেখতে চান উল্লেখ করে গত শুক্রবার দুপুরে নগরীর ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজার ষষ্ঠ দিনে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন নগর মহিলা দলের সভাপতি ও কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি। এ নিয়ে সাড়ে ৫ মিনিটের একটি ভিডিও ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন’ নামে একটি ফেসবুক পেজে আপলোড হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একই ভিডিওতে তিনি সদ্য জামিনে বের হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে নিয়ে প্রশংসা করেন।
বহিষ্কারাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি’র বহিষ্কারাদেশ চিঠিতে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষর করেছেন।
মনোয়ারা বেগম মনির ক্ষমা প্রার্থনা : মহানগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি গতকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লালখান বাজার ওয়ার্ডে সনাতন ধর্মালম্বী মাঝে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তার দেওয়া বক্তব্যের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি হিসাবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে আন্দোলন করেছি। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে গিয়ে ওয়াসা মোড়ে পুলিশি হামলার শিকার হয়ে আহত হই। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় বাগমনিরাম ও লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলার শিকার হই।
এছাড়া অসংখ্যবার রাজপথে পুলিশি হামলাসহ মামলা ও জেল জুলুমের শিকার হই। তারপরও দলের সাথে ছিলাম, আছি ও থাকবো। পদ পদবির জন্য আমি রাজনীতি করি না, আমি রাজনীতি করে শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ও জনগণের কল্যাণে। দলীয় কোন পদ পদবি না থাকলেও একজন সমর্থক হিসাবে আমি আমৃত্যু আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বিএনপি ও মহিলা দলের সাথে থাকবো। পাশাপাশি অঙ্গীকার করছি ভবিষ্যৎতে আমি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোন কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোন দলের কর্মসূচিতে অংশ নেব না।
বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, আর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। দুইজন দুই মতাদর্শের হলেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব জনকল্যাণে কাজ করা। এ নীতিতে বিশ্বাস করে জনকল্যাণকর এ অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত হয়েছি। সেখানে বক্তব্য দেওয়ার পর এলাকার কাজ আদায় করা ও জনকল্যাণে আবেগতাড়িত হয়ে আমি আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অতি প্রশংসা করেছি। মহিলা দলের সভানেত্রী হিসাবে আমার এ ধরণের বক্তব্য দেয়া সমুচিত হয়নি যা আমি স্বীকার করছি। এতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও লজ্জিত। আমার অমার্জনীয় অপরাদের জন্য আমি সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।