একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে এসব আসনে ৩৫ জনকে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৮ জনের অতীতে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অবশিষ্ট ২৭ জনই নতুন মুখ। এদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন নারী প্রার্থীও। এরা হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ও উত্তর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী এডভোকেট ফরিদা আকতার। এছাড়া প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন চিকিৎসকও রয়েছেন। এরা হলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী।
বিএনপির ঘোষিত তালিকায় দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের নাম নেই। অথচ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া এ তিন আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া আসনে ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অপরদিকে গোলাম আকবর খোন্দকার চেয়েছিলেন ফটিকছড়ি আসন থেকে। তিনি ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দুইজনই মনোনয়নবঞ্চিত হন। তবে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে তাঁর পুত্র সামির কাদের চৌধুরী রাউজান আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের কেউ রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে মনোনয়ন চাননি বলে বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির ঘোষিত তালিকায় মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত সবাই নতুন মুখ। এছাড়া চট্টগ্রামের দুইটি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও অবশিষ্ট ১২ আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছে দলটি। জোটকে ছেড়ে দেওয়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) এ দুইটি আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দেয়নি। এ দুইটি আসনে জামায়াত ও এলডিপির একক প্রার্থী রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) আসনে জোটের বাইরে বিএনপি আরো তিনজনকে মনোনয়নপত্র দিয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে চট্টগ্রামের ১২টি আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মামলা, ঋণ খেলাপীসহ বিভিন্ন কারণে এসব আসনে দলের একাধিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য দলে তেমন সমস্যা হবে না। প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত মনোনয়ন পরিবর্তন ও প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও উত্তর জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী ছাড়াও তাঁর বড় ভাই উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরীও মনোনয়ন পেয়েছেন। এ দুইজনের বাইরে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী এল কে সিদ্দিকী’র ছোট ভাই এওয়াইবিআই সিদ্দিকী।
আসনওয়ারি বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্তরা হলেন,
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) : বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নুরুল আমিন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : চট্টগ্রাম পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিভিল সার্জন এবং উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, সাবেক পিজিআর প্রধান কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ ছালাউদ্দিন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) : সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ও কাতারপ্রবাসী নুরুল মোস্তফা খোকন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) : দলের যুগ্ম মহাসচিব ও উত্তর জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক কাদের চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী এলকে সিদ্দিকী’র ছোট ভাই এওয়াইবিআই সিদ্দিকী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ) : ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) : দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র সামির কাদের চৌধুরী, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার ও উত্তর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী এডভোকেট ফরিদা আকতার।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) : উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, উপজেলা বিএনপি অপর অংশের আহ্বায়ক আলহাজ শওকত আলী নূর ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমেদ হাসনাত।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) : দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও বিএনপি নেতা আলহাজ এরশাদ উল্লাহ।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) : মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ মো. শামসুল আলম ও নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) : দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) : আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) : দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) : সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) : এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) : সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াতে আ ন ম শামসুল ইসলাম অথবা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) : দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।