বাবা-মায়ের নাম ভিন্ন। শুধু আসল অপরাধীর সঙ্গে নামের মিল আছে আংশিক। আর এর সুযোগ নিয়ে আসল অপরাধীকে ‘বাঁচিয়ে দিতে’ নিরীহ এক ব্যবসায়ীকে ‘অপরাধী’ সাজিয়ে জেলে পাঠালো পুলিশ।
হাটহাজারী থানায় ঘটেছে এমন কাণ্ড। গত ৫ ডিসেম্বর ওয়ারেন্টের আসামি হিসেবে মো. জাহেদুল আলম নামের এক ব্যবসায়ীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। হাটহাজারীর সিটি সেন্টারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ ওয়ারেন্টের প্রকৃত আসামির নাম জাহিদুল আলম। জাহেদুল ও জাহিদুলের নামের খানিকটা মিল থাকলেও তাদের বাবা ও মায়ের নাম ভিন্ন। জাতীয় পরিচয়পত্রও ভিন্ন। তবে কাকতালীয়ভাবে দুজনেরই বাড়ি হাটহাজারীর কাটিরহাটের ধলই ইউনিয়নে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটহাজারী থানা পুলিশ বিশদভাবে যাচাই-বাছাই না করেই প্রকৃত আসামি ‘জাহিদুল আলমের’ বদলে জাহেদুল আলমকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ, প্রকৃত আসামি বাঁচাতেই পুলিশ এমন কাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় এমএস ব্রাইড সোপ ফ্যাক্টরির মালিক জাহিদুল আলম। তিনি ওই ফ্যাক্টরির নামে ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখা থেকে ৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। খেলাপি হওয়ায় ২০১৮ সালে জাহিদুল আলমের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা (নং ৩৮/২০১৮) দায়ের করেন ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখার জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। এ মামলায় জাহিদুলকে এক বছরের সাজা দেন চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
এর আগে ২০১৬ সালে ১১ লাখ টাকা পাওনা আদায়ের জন্য জাহিদুল আলমের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা (সিআর ১৩০৬/২০১৬) করেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার হাজী আজগর আলী মার্কেটের সোহা এন্টাপ্রাইজের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকী। এই মামলায়ও জাহিদুলকে দুই মাসের সাজা দেন আদালত।
এই দুই মামলারই আসামি মো. জাহিদুল আলমের পিতা ফরিদ আহমদ এবং মাতা ফরিদা আক্তার। তার বর্তমান ঠিকানা বাড়ি নং ৭৯, রোড ১, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, থানা: ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম। অন্যদিকে স্থায়ী ঠিকানা পশ্চিম ধলই, ডাকঘর: কাটিরহাট, থানা: হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯২…..৬৩৬০।
দুই মামলাতেই গত বছরের ৩০ মে জাহিদুলের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত। ওই ওয়ারেন্টের কপি হাটহাজারী থানায় পাঠানো হয়।
জানা গেছে, গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুই মামলারই এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কিন্তু যাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে, তিনি হচ্ছেন মো. জাহেদুল আলম। তার পিতা ফরিদুল আলম এবং মা হালিমা বেগম। তার ঠিকানা— ছোটকা মজুমদার বাড়ি, পশ্চিম ধলই, ডাকঘর কাটিরহাট, থানা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯২…..২০২০।
নামের মিলে জেলে যাওয়া মো. জাহেদুল আলমের আইনজীবী মোহাম্মদ এমরান নাঈম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখা থেকে প্রকৃত আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্টিফাইড কপি আনা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ওয়ারেন্টের ব্যক্তির ছবির সাথে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির চেহারার কোনো মিল নেই। দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও আলাদা। নামেই শুধু আংশিক মিল। স্থায়ী ঠিকানায় মিল থাকলেও বাবা ও মায়ের নামের মিল নেই। অথচ ব্যাংকের সাথে প্রতারণা না করেও জেল খাটছে জাহেদুল আলম।’
এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ মনে করেছে এ লোক ওয়ারেন্টভুক্ত সেই লোক। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই লোক আসল অপরাধী না হলে অবশ্যই ছাড়া পাবে।’