বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এবার বিশ্বকাপ যে, নিজেদের ঘরেই ইংলিশরা রেখে দিতে প্রস্তুত তা আরো জোরালো দাবি রাখলো এই জয়ে। প্রথমে ব্যাট করে চার অর্ধশতকের ওপর ভর করে ৩১১ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন বেন স্টোকস। ৩১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন কুইন্টন ডি কক।
প্রতিক্ষার পর ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯। বৃহস্পতিবার লাল-সাদা, বেগুনি-কালো পতাকায় যেন এক বর্ণিল গালিচায় পরিণত হয় লন্ডনের কেনিংটন দ্য ওভাল স্টেডিয়ামের গ্যালারী। প্রিয় দলের ট্যাটু-স্টিকার গায়ে জড়িয়ে স্বদেশী ক্রিকটারদের উৎসাহের প্রতীক হয় দর্শকের সারিগুলো। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ২৩ হাজার ৫০০ দর্শক ধারণ আকৃতির গ্যালারীতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো স্টেডিয়াম। নিরাশ হয়নি দর্শকরাও দুদলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে রোমাঞ্চিত হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে শেষ হাসি হাসলো ইংলিশরা।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দ্য ওভালে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার জনি বায়েস্ট্রোর উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের শুরুতেই দুটি চমক দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম চমক দিলেন আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস- খেলার শুরুতেই বল হাতে তুলে দিলেন লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের হাতে। পেস সহায়ক পিচে শুরুতেই স্পিন আসলেই এই দৃশ্য ছিলো চমকানোর মতোই। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতেও দেরি করেননি এই স্পিনার। ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তুলে নিলেন উইকেট। জনি বায়েস্ট্রোকে ফেরালেন শূন্য রানে।
প্রথম উইকেট হারিয়ে অর্ধশতক হাঁকিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন জেসন রয় ও জো রুট। দুজনে মিলে গড়েন ১০৬ রানের জুটি। কিন্তু অর্ধশতক করে ৫৩ বলে ৮ চারে ৫৪ রান করে পেহলিকায়োর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জেসন রয়। ৫১ রানে রুটকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। পর পর দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফের চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। এরপর দলের হাল ধরেন বেন স্টোকস। সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে আউট হন তিনি। অধিনায়ক ইয়ান মরগান ও বেন স্টোকস। এই দুই ব্যাটসম্যন চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ফের ১০৬ রান। ৬০ বলে ৪ চারে ও ৩ ছক্কায় ৫৭ রান করে ইমরান তাহিরের শিকার হন। একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন স্টোকস। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে থেকেই লুঙ্গি নিগিদির বলে হশিম আমলার কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৭৯ বলে ৯ চারে ৮৯ রান করেন স্টোকস। এরপর উল্লেখযোগ্য আর কোন বড় স্কোর করতে পারেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত জস বাটলারের ১৮ ও ক্রিস ওয়াকসের ১৩ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড।
ইংলিশ বোলাদের মধ্যে লুঙ্গি নিগিদি ৩টি, ইমরান তাহির ও ড্যুয়েন পেটারিয়াস ২টি এবং আন্দিল পেহলিকায়ো একটি উইকেট শিকার করেন।
৩১২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চারের বাউন্সিং বলে কপালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন। ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি অ্যাইডেন ম্যাকরাম। ১১ রান করে আর্চারের বলে রুটের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মাঠে নেমে ৫ রান করে বোলার আর্চারের দ্বিতীয় শিকার হলেন ডু প্লেসিস। চাপে পড়া আফ্রিকাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ওপেনার ডি কক। কিন্তু আশা দিয়েও হতাশ করেন তিনি। ৭৩ বলে ৬৮ রান করে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৬৮ রান করে লিয়াম প্লাঙ্কেটের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। ব্যাট করতে নেমে ডুমিনি আউট হন ৮ রান করে। ড্যুয়েন পেটারিয়াস ১ রান করে রান-আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া হাশিম আমলা চিকিৎসা নিয়ে ছয় নাম্বারে পুনঃরায় ব্যাট করতে নামেন। রাসি ভ্যান ডার দুসেনর সঙ্গে আমলা কিছুক্ষণ মাঠে টিকে থাকলেও, বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ এক ফিফটি হাঁকিয়ে ৬১ বলে ৪ চার ও এক ছক্কায় আর্চারের শিকার হয়ে ফেরেন দুসেন। আন্দিল পেহলিকায়ো করেন ২৪ রান। ভালো হয়নি আমলার ইনিংসও। ১৩ রান করে প্ল্যাঙ্কেটের শিকার হন। শেষ দিকে কাগিসো রাবাদার ১১ ও লুঙ্গি নিগিদির ৬ রানে ৩৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর প্রথম জয়ে ইংল্যান্ড টিম হয় আনন্দে আত্মহারা। দর্শকের তালিতে মুখরোতি হয় পুরো স্টেডিয়াম।
ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে জেফরা আর্চার ৩ টি, লিয়াম প্লাঙ্কেট ও বেন স্টোকস ২টি, মইন আলি এবং আদিল রশিদ একটি করে উইকেট শিকার করেন।
ব্যাট হাতে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ রানের ইনিংস খেলে ও বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে সেরা নৈপূণ্য দেখিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ইংল্যান্ডের পেসার অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।