
পুষ্টির নামে মুরগি খাচ্ছেন! কিন্ত এর মধ্য দিয়েই প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর ‘ক্রোমিয়াম’ ঢুকছে মানবদেহে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে ক্যান্সারসহ ব্রেইন, লিভার, কিডনি ডেমেজ ও চর্মরোগের। সেইসাথে সম্প্রতি নতুন করে যুক্ত হয়েছে মুরগীকে ‘চিনি পানি’ খাওয়ানোর প্রবণতা। যার ফলাফল মানবদেহে ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি। এখনই এর প্রতিকার না করলে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা মেটাতে গত দেড় দশকে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগীর ওপর নির্ভরতা। দেশি জাতের তুলনায় খুব অল্প সময়েই খাওয়ার উপযোগী ও দাম কম হওয়ায় ব্রয়লার মুরগির জনপ্রিয়তা বেড়েছে দিন কে দিন। কিন্তু গত চার-পাঁচ বছরে শুরু হয়েছে ট্যানারি বর্জ্যে মুরগির খাবার তৈরির এক বিপদজনক তৎপরতা।
এ নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন। নিজে বাসায় ২০-২৫টি মুরগী এক মাস লালন পালন করে , আমদানি করা ও বাজারে সহজলভ্য দু’ধরনের পোল্ট্রি ফিড খাইয়ে দু’সপ্তাহ অন্তর এগুলো জবাই দিয়ে, মুরগীর বিভিন্ন অংশে ক্ষতিকর ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পেয়েছেন সহনশীল মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেশি। একজন প্রাপ্ত বয়স্কের শরীরে ক্রোমিয়ামের সহনশীল মাত্রা-৩৫ মাইক্রোগ্রাম, যা কিনা বাচ্চাদের বেলায় আরো কম।
প্রাপ্ত বয়স্কের শরীরে ক্রোমিয়ামের সহনশীল মাত্রা-৩৫ মাইক্রোগ্রাম
৬ মাস বয়সী বাচ্চার শরীরে ক্রোমিয়ামের সহনশীল মাত্রা-০.২ মাইক্রোগ্রাম
৭-১২ মাস বয়সী বাচ্চার শরীরে ক্রোমিয়ামের সহনশীল মাত্রা-৫.৫ মাইক্রোগ্রাম
৪-৮ বছর বয়সী বাচ্চার শরীরে ক্রোমিয়ামের সহনশীল মাত্রা-১৫ মাইক্রোগ্রাম
গবেষণায় দেখা যায় এক মাস বাজারের পোল্ট্রি ফিড খাওয়ানোর পর মুরগীর মাংস, কলিজা, মগজসহ সাতটি অংশে যে ক্রোমিয়াম মিলেছে তা ভয়াবহ।
এক মাস খাওয়ানোর পর
মাংস-২৫০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
রক্ত- ৭০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
চামড়া-৫৫৭ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
কলিজা-৪০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
হাড়-১০০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
মগজ-১০০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
আর দুই মাস পর মুরগীর মাংস, রক্ত, চামড়া ও কলিজায় ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি বেড়ে মারাত্মক রূপ নিয়েছে। যা কিনা হাড় ও মগজের বেলায় দ্বিগুণ ও সাড়ে চার গুণ।
২ মাস খাওয়ানোর পর
মাংস-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
রক্ত-৮০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
চামড়া-৩২৮ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
কলিজা-৬০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
হাড়-২০০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
মগজ-৪৫০০ মাইক্রোগ্রাম/প্রতি কেজিতে
এমন বাস্তবতায় শিশুকে মুরগীর কলিজা, মগজ কিংবা হাড়ের স্যুপ খাওয়ানোর বেলায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ গবেষকের। ড. আবুল হোসেন জানালেন, ব্রয়লার, কক কিংবা দেশি তিন ধরনের মুরগীই ক্ষতিকর হতে পারে যদি ট্যানারি বর্জ্যে খাবার তৈরি হয়। শুধু হঠাৎ অভিযানে সুফল মিলবে না। দরকার সার্বক্ষণিক নজরদারি। সেইসাথে নিরাপদ খাদ্য কমিশনকে তৎপর হওয়াও পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।
সুত্রঃ বাংলাভিশন
