বারইয়ারহাট ‘গ্রীন টাওয়ার’এর জমির মিথ্যা মালিকানা দাবীর অভিযোগ

515

 

মিরসরাই প্রতিনিধি

উত্তর চট্টগ্রামের বানিজ্যকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত বারইয়ারহাট পৌরসভায় অবস্থিত সর্ববৃহৎ শপিং কমপ্লেক্স ‘গ্রীন টাওয়ার’ এর জমির মিথ্যা মালিকানা দাবী করছেন কতিপয় ব্যক্তি। জমির মালিকানা নিয়ে কোন জটিলতা কিংবা সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন গ্রীন টাওয়ারের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন ইরান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম-সহ পরিচালকরা। তারা লিখিত প্রতিবাদে জানান ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনৈক সাহাব উদ্দিন (শাহাবুদ্দিন) নামক ব্যাক্তির পক্ষে মালিকানা দাবি’ র সাথে গ্রীন টাওয়ারের জায়গার মালিকানার কোন সম্পর্ক নেই। প্রতিবাদ জানিয়ে তারা আরো বলেন, সাহাব উদ্দিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ‘গ্রীন টাওয়ার’- এর সুনাম নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। নিজে উপস্থিত না থেকে বাহিরের লোক (শাহাজাদা ইমরান) দ্বারা সংবাদ সম্মেলনেরও প্রতিবাদ করেন তারা।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ‘গ্রীন টাওয়ার’ মালিকানাধীন জমির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই শপিং মলের সম্পত্তি সম্পূর্ণ ব্যাক্তি মালিকানা থেকে ক্রয়কৃত। জনৈক সাহাব উদ্দিন নামক এক ব্যক্তি ইতিপূর্বেও এই টাওয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে মালিকানা দাবি করে কিন্তু তার মালিকানার সত্যতা দেখাতে পারেনি আদালতকে। এ নিয়ে বার বার সে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সর্বশেষ মীরসরাই প্রেস ক্লাবকেও মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানায় এই গ্রীন টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

জনৈক সাহাব উদ্দিনের দাবিকৃত সম্পত্তির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বর্ণিত আর.এস ১২/১৬ দাগের সামিল বি.এস ২৫০/১৩ দাগের মূল মালিক ছিল কুরফুলের নেছা স্বামী- মৃত ক্যাপ্টেন ডাঃ জালাল আহম্মদ তৎ মৃত্যতে ওয়ারিশ সূত্রে মালিক দুই পুত্র, দুই কন্যা। এক কন্যা হোসনে আরা বেগম হইতে খরিদসূত্রে দলিল নং- ৪৩৪৫, তাং- ০৩/১০/১৯৯৪ইং মূলে সাহাব উদ্দিন ও তাহার অপর দুই ভাই দুই দাগে ৭ শতক জমি ক্রয় করেন। প্রকৃতপক্ষে সাফকবলা দলিল নং-৪৩৪৪, মূলে জনৈক মোঃ আবু তাহের উল্লেখিত হোসনে আরা বেগমের নিকট হইতে একই তপশীলের সমপরিমান ৭ শতক জমি প্রথমে ক্রয় করিয়া দখলস্বত্ব অর্জন করিয়া ২৫০ দাগে হোসনে আরা বেগমের হিস্যাংশে প্রাপ্ত সমূদয় ৪.৩০ শতক জমি নিজ নামে নামজারী বি.এস খতিয়ান নং- ৭০৬৪ সৃজন করিয়া হাল সন পর্যন্ত খাজনা দাখিলা আদায় করিয়া ভোগ দখলে থাকাকালীন অবস্থায় গ্রীন টাওয়ার কর্তৃপক্ষ সিনিয়র আইন জীবি ও দলিল লিখক দিয়ে যাচাই বাচাই করে উক্ত জমিসহ অপরাপর জমি সাফ কবলা দলিল মূলে খরিদ করেন। উল্লেখিত সাহাব উদ্দিন তাহার পরবর্তী ৪৩৪৫ নং দলিলের তাহাদের খরিদাংশের হিস্যাংশের দখল স্বত্ব না পেয়ে মিরসরাই সহকারী জজ আদালতে বিভাগ মামলা নং- ১০৮/২০১৪ দায়ের করেন। সাহাব উদ্দিনের হিস্যাংশ ২.৩৩ শতক দাবী করিয়া মিথ্যা আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬/১১/২০১৪ ইংরেজীতে মিরসরাই সহকারী জজ আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। পরবর্তীতে গ্রীণ টাওয়ার ও একতা টাওয়ার কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে মাননীয় জেলা জজ আদালত চট্টগ্রামে মিছ আপিল নং ০৭/২০১৫ দায়ের করেন।

তিনি জানান, তৎ প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারীতা স্বগিত করেন। উক্ত জেলা জজের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সিভিল রিভিশন নং-৩৮০৮/২০১৫ দায়ের করেন হাইকোর্ট বিগত ০২/১১/২০১৫ইং তারিখে বিবাদমান পক্ষদ্বয়ের উপর ২৪ শতকের আন্দর বিরোধীয় ২.৩৩ শতক সম্পত্তি উপর ০৬ মাসের স্থিতাঅবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন।। এখানে উল্লেখ্য গ্রীণ টাওয়ার এর ভবনে বি.এস ২৫০ দাগের ২৪ শতকের আন্দর ১৬.৩০ শতক জায়গা রয়েছে। ৬ মাস পরবর্তীতে উক্ত ৩৮০৮/২০১৫ইং মামলাটির কার্যক্রম না চলায় উক্ত মামলাটি বাতিল হইয়া যায়। এখানে আরও উল্লেখ্য, বি.এস ২৫০ দাগে খতিয়ান মতে ২৪ শতক সম্পত্তি হইলে ও নকশা মতে জমির পরিমান ১৯.৭২ শতক যাহার অনুকূলে মাননীয় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পরিচালিত এডভোকেট কমিশনার প্রদত্ত বিগত ১৩/১১/২০১৪ইং তারিখে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন রায় রহিয়াছে। সাহাব উদ্দিনের অপর দুই ভাইয়ের অংশ ক্রয় করিলে, ক্রয়কৃত দলিল মোতাবেক তাহাদের স্বত্ব না থাকায় উক্ত দলিলের অর্থ ফেরৎ পাওয়ার জন্য বাদীর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সিনিয়র জজ আদালত, মিরসরাই চট্টগ্রামে অপর মামলা নং- ১৮১/২০১৫ দায়ের করেন। যাহা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। বি.এস ২৫০ দাগে গ্রীণ টাওয়ার, বণিক টাওয়ার, একতা টাওয়ারসহ বিভিন্ন ভবন ও মার্কেট রহিয়াছে। সাহাব উদ্দিন তাহার মিথ্যা দাবীকৃত ভূমি নির্ধারনের জন্য বিজ্ঞ আদালতে বিভাগ মামলা নং-১০৮/২০১৪ দায়ের করিয়াছেন এবং তাহা অদ্যবধি বিজ্ঞ আদালতের বিচারাধীণ রহিয়াছে, এমতাবস্থায় সাহাব উদ্দিন কর্তৃক নিজ ইচ্ছেমত ভুমি নির্ধারণের দাবীর কোন ধরণের সংবাদ সম্মেলনের কোন সুযোগ নাই, যাহা আদালত অবমাননার সামিল।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করেন, এখানে সাহাব উদ্দিন যাহার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছে তাহার দায়িত্ব সাহাব উদ্দিনকে জমি বুঝাইয়া দেওয়া। ২৫০ দাগে সাহাব উদ্দিনের কোন দখল, স্বত্ব নাই, নামজারী ও উক্ত জমিনের মালিকানা প্রমানের জন্য কোন খাজনা দাখিল নাই। গ্রীণ টাওয়ার কর্তৃপক্ষের নিকট তাহার ক্রয়কৃত জমি হইতে দখলে আর ও কম জমি আছে। সাহাব উদ্দিনের জমি কোথায় আছে তাহা গ্রীণ টাওয়ার কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয় নয়। গ্রীণ টাওয়ার মার্কেটির উপর আদালতের কোন প্রকার স্থায়ী/অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নাই।

চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন ইরান জানান, উক্ত গ্রীণ টাওয়ার মার্কেটটি নিয়ে একটি প্রকাশ্য/গোপন তদন্ত প্রতিবেদন মাননীয় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্বারক নং- ২৯৭(২)২০১৬মূলে মাননীয় পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম বরাররে প্রেরণ করা হয়। মাননীয় পুলিশ সুপার রিপোটটিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকারী/বেসরকারী কর্তৃপক্ষের সকল আইন-কানুন অনুসরণ করিয়া গ্রীণ টাওয়ার কর্তৃপক্ষ ভবনটি নির্মান করিয়াছেন বলেও জানান প্রতিবাদ লিপিতে জানান তিনি।

উল্লেখ্য. গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) মিরসরাই প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বারইয়ারহাটে ‘গ্রীন টাওয়ার’ এর জমির মালিকানা দাবি করেন মো. সাহাবুদ্দিন নামে এক প্রবাসী। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার বোনের ছেলে শাহাজাদা ইমরান। এনিয়ে গ্রীন টাওয়ারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানালেও নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকার কোন ডকুমেন্টস্ তিনি দেখাতে পারেননি।

এবিষয়ে গ্রীন টাওয়ার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন ইরান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান এই বিষয়ে আমাদের আইনগত বিষয় অব্যাহত আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here