ব্যাংকের জন্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

250

 

এখন থেকে কোনো ব্যাংক ৫০ লাখ টাকার বেশি দামের সেডান (প্রাইভেট কার) এবং এক কোটি টাকার বেশি দরের এসইউভি কিনতে পারবে না।

মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমাতে জমি কেনা, অফিস ভাড়া, সাজসজ্জা এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাসহ অন্য যে কোন সভা আয়োজনের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

‘ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় হ্রাসকল্পে বিলাসবহুল যানবাহন, আড়ম্বরপূর্ণ সাজসজ্জা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যয় পরিহার’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবস্থাপনার উপর আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে ব্যাংকের বিভিন্ন খাতে ব্যয়ে সাশ্রয়ী মনোভাব পোষণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার ব্যাংকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একইসাথে ব্যবসার প্রসারে সুদ/চার্জ/ফি ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক করার সক্ষমতা বাড়ায়।

সম্প্রতি কোন কোন ব্যাংকে নানাবিধ উচ্চ ব্যয় নির্বাহের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যাংক-কোম্পানির অর্থে সম্পদ ক্রয় ও অফিস স্পেস ভাড়ার ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যয়, পর্ষদ চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল মোটরগাড়ী ক্রয়, ব্যাংক শাখার সাজসজ্জায় উচ্চ ব্যয়, ব্যাংকের গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, ঢাকার বাইরে পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদের সহায়ক বিভিন্ন কমিটির সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চ ব্যয় নির্বাহ, বিজনেস ডেভেলপমেন্টের নামে বাহুল্য খরচ, বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিংয়ের নামে অতিরিক্ত ব্যয়, বিলাসী আপ্যায়ন, যথেচ্ছ স্টেশনারি ও বিবিধ খরচ ইত্যাদি বিষয় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এই ধরণের প্রবণতা নিরুৎসাহিত করতে যে সব অনুশাসন পরিপালন করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

মোটরগাড়ি ক্রয় এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে

>> ৫০ লাখ টাকার অধিক মূল্যের সেডান (প্রাইভেট কার) এবং এক কোটি টাকার অধিক মূল্যের এসইউভি ব্যাংকের টাকায় কেনা যাবে না। তবে ব্যাংকের রেমিটেন্স বহনের কাজে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক ব্যবহৃত নিরাপত্তা-যানবাহনের অনুরূপ গাড়ি ক্রয় করা যাবে।

>> অন্য কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে লিজ ফাইন্যান্সিং সুবিধা গ্রহণ করে কোন মোটরগাড়ি সংগ্রহ করা যাবে না।

>> ব্যাংকের অর্থে কেনা মোটরযান বহরে যানবাহনের সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে হ্রাসপূর্বক ব্যাংকের জনবল ও অফিস/শাখার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। দেশীয়ভাবে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান হতে গাড়ী কেনার মাধ্যমে এ খাতে ব্যয়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০ ভাগের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। সাধারণভাবে পর্ষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর জন্য সার্বক্ষণিক গাড়ীসহ সকল যানবাহন অন্ততঃ পাঁচ বছর ব্যবহারের পর প্রতিস্থাপন করতে হবে।

>> ব্যাংকের চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য পরিচালকরা ব্যাংকের টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।

সাজসজ্জায় উচ্চ ব্যয় পরিহারের ক্ষেত্রে

>> নতুন শাখা স্থাপন বা বিদ্যমান শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শহর এলাকায় ৬ হাজার বর্গফুট এবং পল্লী অঞ্চলের শাখার জন্য ৩ হাজার বর্গফুটের ভবন/স্পেস ব্যবহার করতে হবে।

>> আইটি সরঞ্জাম এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়া অন্যান্য খাতে (ভল্ট স্থাপন, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, অফিস ফার্নিচার, ইলেকট্রিক/ইলেকট্রনিক ইত্যাদি) নতুন শাখা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য ১ হাজার ৮৫০ টাকার বেশি ব্যয় করা যাবে না

>> শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি ব্যয় করা যাবে না।

>> বিদ্যুৎ ব্যবহার, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও বিলাসী ব্যয় পরিহার করতে হবে।

>> সভা অনুষ্ঠান, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যয় কম করতে হবে। ব্যাংকের টাকায় ঢাকার বাইরে পরিচালনা পর্ষদ, পর্ষদের সহায়ক বিভিন্ন কমিটির সভা অনুষ্ঠান যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।

>> ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, অ্যাপায়ন খরচ, স্টেশনারি এবং বিবিধ খরচের নামে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করতে হবে।

>> স্থাবর/স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এবং অফিস স্পেস ভাড়া/ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত বাজারদর যাচাইপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here