ভাইয়া, আমি কি আর স্কুলে যেতে পারবো না?

271


স্কুল থেকে ফিরছিলো নাসরিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলো। আচমকা সামনে পড়লো একটি মিনিট্রাক। এক ধাক্কায় ছিটকে পড়লো ছোট্ট মেয়েটি। বাম পা চলে গেলো ট্রাকের চাকার নিচে। এমনভাবেই থেতলে গেছে যে, এই পা টেকানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই!

‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা মোহাম্মদ আজাদের। চা দোকানের কর্মচারি। সামান্য যে টাকা পান, তাতে কোনমতে সংসার চালাচ্ছিলেন। অনটনের সংসারেও মেয়েকে পড়াশোনা করানোর আকাঙ্খায় এতটুকুন ছেদ পড়েনি কোনোদিন।

মিরসরাইয়ের ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের চুনি মিঝিরটেক গ্রামে তাদের বাড়ি। স্থানীয় চুনি মিঝিরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে আজাদের মেয়ে নাসরিন সুলতানা ইমা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে বড়।

গত শনিবার স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, নাসরিনের বাম পা এতটাই আঘাতপ্রাপ্ত যে, এটি টেকানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বরং দ্রুত এটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে!

অভাবের সংসারে নিয়মমাফিক সবই চলছিলো। ভালো-মন্দে গরীবের ঘর যেমন আলোকিত থাকে, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তেমনটাই ছিলো আজাদের পরিবারও। আকস্মিক দুর্ঘটনায় আলোকিত ঘরটি ঢেকে গেলো ঘোর অমানিশায়। আজাদ বুঝতে পারছেন না, কি করে তার মেয়ে হাঁটবে? কি করে চিকিৎসার ব্যয় মেটাবেন।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, হতভাগী নাসরিনের দুর্ঘটনা এবং তার পরিবারের দুরবস্থার বিষয়টি আমাকে জানাচ্ছিলেন তাদের প্রতিবেশী সেনা সদস্য রিয়াজ সাহেব। উনি বলছিলেন রক্তাক্ত নাসরিনকে হাসপাতালে নেওয়ার মুহূর্তের কিছু কথা। ছোট্ট মেয়েটি যেন বুঝে গিয়েছিলো ওর পা ওর সঙ্গে আর থাকছে না! এ জন্যেই কি-না তখন বারবার বলছিলো— ভাইয়া, আমি কি আর আগের মতো হাঁটতে পারবো না? ভাইয়া, আমি কি আর স্কুলে যেতে পারবো না?

কথাটি আমার বুকে কাঁপন তুলে দিলো। রক্তাক্ত নাসরিনের প্রশ্নের জবাব এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা কিছু মানুষ চাইলেই ওর জীবনের গভীর সংকটময় মুহূর্তে সামান্যতম অবদান রাখতে পারি। এই মানবিক রাষ্ট্রে আমরা কত মানুষ। আমাদের একটি মেয়ে পা হারানোর পথে। পা হারিয়েও স্কুলে যাওয়ার কি আকুতি!

প্রথম ছবিটি আরেকবার দেখুন প্লিজ। কি সুন্দর হাসি নাসরিনের মুখে। কি প্রাণবন্ত! আর দ্বিতীয় ছবিটি? মনে হচ্ছে, তার সবই শেষ! গরীবের মেয়ে তো। একটি পা চলে যাবে, চিন্তার শেষ নেই!

আহা, খুবই খারাপ লাগছে। দায়িত্ব তো রাষ্ট্রেরই নেয়ার কথা। নাসরিন তো এই রাষ্ট্রেরই সম্পদ। ওর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা, পা যদি শেষপর্যন্ত কেটে ফেলতেই হয়, আবার কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেয়া এবং সবশেষে ওকে আবারও স্কুলমুখী করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সহানুভূতিশীল মানুষদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আসুন, আরেকবার সহানুভূতি দেখাই। মানুষের জন্যেই মানুষ— এর যথার্থতা প্রমাণ করি। ছোট্ট নাসরিন নিশ্চয়ই উঠে দাঁড়াবে। আবার হাঁটবে। স্কুলে যাবে। নাসরিনেরা
স্কুলে গেলেই আলোকিত হবে দেশ।

বিকাশ নম্বর 01819832555

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here