মনে পড়ে আশরাফুলকে

233

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে মহাকাব্যিক এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাস হয়ে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১৮ জুন, ২০০৫ সালের কথা বলছি। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আশরাফুল ম্যাজিকে সেদিন অস্ট্রেলিয়া বধের মহাকাব্য রচিত হয়েছিল।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া যত বারই মুখোমুখি হয়েছে; ঘুরেফিরে উঠে এসেছে দুটি নাম-মোহাম্মদ আশরাফুল এবং কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন। বিশ্বকাপে আজ ইংল্যান্ডের আরেক ভেন্যু নটিংহ্যামে অজিদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

কাকতালীয় ব্যাপার; সেদিন ছিল জুন মাস, আজও তাই। পার্থক্য কেবল ১৮ আর ২০-এ। সাকিব, লিটনদের ছাপিয়ে আলোচনায় সেই কার্ডিফ এবং আশরাফুলের ম্যাজিক্যাল শতরানের ইনিংস।

যাতে চড়ে ১৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবেধন নীলমণি ওই একটিই জয় টাইগারদের। দুদলের সাক্ষাতের ২৯ বছর পেরিয়ে গেছে। গত হওয়া বছরে ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে মোট ২০ বার দেখা হয়েছে। তাতে অজিদের ১৮ জয়ের বিপরীতে, বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি। বৃষ্টিতে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।

ইংল্যান্ডের মাটিতে দুদল খেলেছে ৫ ম্যাচ; তাতেও এগিয়ে অজিরা। নটিংহ্যামে আজ ষষ্ঠবারের লড়াইয়ে নতুন আশরাফুলের খোঁজে টাইগাররা! আশরাফুল সেঞ্চুরি করলে হারে না বাংলাদেশ। আবেগের ফাঁকা বুলি নয়; পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। ফিক্সিংকা-ে ক্যারিয়ারে অনিচ্ছাকৃত ছেদ পড়ার আগে মোট ১৭৭ ওয়ানডে খেলেছেন আশরাফুল। যাতে ২০টি অর্ধশত ইনিংসের পাশে জ্বলজ্বলে ৩টি শতক রয়েছে তার।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্ডিফে ২০০৫ সালে প্রথম সেঞ্চুরি; বাকি দুটির একটি ২০০৮ সালে এশিয়া কাপে লাহোরে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে। কার্ডিফ জয়ের নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল আশার ফুল থেকে আজ কাগজে ফুল; যাতে গন্ধ, বর্ণ নেই। ফিক্সিং দুর্গন্ধে জড়ানো তার গা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে ছিলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পরে মাঠে ফিরলেও আগের সেই আগুন ফরম নেই।

টিকে আছেন না থাকার মতো। কার্ডিফ ম্যাচের (মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা ও তুষার ইমরান বাদে) সতীর্থরা একে একে অবসরে গেলেও এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি আশরাফুল। জাতীয় দলের জার্সিতে মাশরাফি এখনো খেলে যাচ্ছেন, দলের নেতৃত্বভারও তার কাঁধে। অথচ ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্ডিফ ম্যাচে খেলা জাভেদ ওমর, নাফিস ইকবাল, হাবিবুল বাশার সুমন, আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ পাইলট, তাপস বৈশ্য, নাজমুল হোসেনরা কেউ আনুষ্ঠানিক, কেউবা অনানুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দিয়েছেন! কার্ডিফ জয়ের নায়ক আশরাফুল আর নটিংহ্যামে আজ মাশরাফির মাঠে নামার মধ্য দিয়ে পুরনো স্মৃতি জেগে উঠলেও, অজি দলটির সেই সদস্যরা সবাই কিন্তু অতীত।

গিলক্রিস্ট, হেইডেন, পন্টিং, মার্টিন, ক্লার্ক, মাইক হাসি, ক্যাটিচ, হগ, গিলেস্পি, ক্যাসপ্রোভিচ, ম্যাকগ্রা- অবসরে থাকা অজি এই ক্রিকেটাররা কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে কারও দিন কাটছে। কার্ডিফে আশরাফুলের শত রানের সঙ্গে সেদিন মাশরাফি, তাপস, নাজমুল হোসেনরাও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। মাশরাফিদের তোপে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৯ রান তোলে অজিরা। জবাবে অ্যাশের শতরান টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের ভীত গড়ে দেয়।

নটিংহ্যামে আজ এমন কিছুর প্রত্যাশা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফরমে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এক ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন লিটন কুমার দাস। ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তামিম ইকবাল খান। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, মোসাদ্দেকদের কেউ জ্বলে উঠলে নটিংহ্যামে নতুন ইতিহাস রচনা কেবলই সময়ের ব্যাপার। নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়া বধ আর সাকিব, লিটন, তামিমদের আশরাফুল হয়ে ওঠার গল্পটা লেখার অপেক্ষা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here