মিরসরাই উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আদিল হত্যার ৫ বছর বিচার পাওয়া নিয়ে শংকিত পরিবার

606

 

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাই উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সদস্য আদিল মাহমুদ চৌধুরী হত্যাকান্ডের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ ১০ অক্টোবর। ২০১৪ সালের এইদিনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকান্ডের পরদিন তার বাবা আবু তাহের চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামী করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে হত্যা মামলার আসামীরা সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে জামিনে রয়েছে। এদিকে খুনের ঘটনার ৫ মাসের ব্যবধানে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি পুত্র শোকে মারা যান আদিল হত্যাকান্ড মামলার বাদী ও তার পিতা আবু তাহের চৌধুরী। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি মারা যান আদিলের মা জিন্নাতুন নাহার বেগম।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর আদিলের বাবা আবু তাহের চৌধুরী বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামী করে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নম্বর ২)।

মামলার আসামীরা ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জামিন নেন। ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, মিরসরাই এ আতœসমর্পন করে জামিনের আবেদন করলে আদালতের তৎকালিন ম্যাজিষ্ট্রেট শর্মিলা রায় লাভলী তাদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর কিছুদিন পর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসে।

আদিলের ছোট ভাই আদনান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শফিউল আলম প্রকাশ কানা শফির নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন শসস্ত্র সন্ত্রাসী আমার বড় ভাইকে নৃশংসভাবে খুন করে। শফিদের সাথে ২০০৪ সাল থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল আমাদের। এই নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও দায়ের করা হয়। কিন্তু শফির ভাই শাহ আলম ও তার ভাতিজারা ২০১৩ সালে শবে কদরের রাতে সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের বাড়ি প্রাঙ্গনে আমার ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এই হত্যাকান্ড পূর্ব পরিকল্পিত, সন্ত্রাসীরা এলাকার চিহ্নিত। বিভিন্ন সময় তারা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। আমাকে বিভিন্ন ফোন থেকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার নিরপরাধ ভাইকে তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, ভাইয়ার শোকে আমার বাবা ও মাকে হারিয়েছি। হত্যার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি। কখন মামলার রায় হবে বুঝতেছিনা। আমি দ্রত বিচার কাজ শেষ করে আসামীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার উদ্দিন সেলিম বলেন, আদিল মিরসরাই উপজেলা ছাত্র রাজনীতির মেধাবী ছাত্র নেতা ছিল। তাকে হারানোর শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আমি আদিলের খুনীদের যথোপযুক্ত বিচারের দাবী জানাচ্ছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে শুক্রবার (আগামীকাল) তার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এছাড়া তার আত্মার মাগফেরাতের জন্য কোরআর খতম ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাত ৮ টার সময় মিরসরাই উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের ভোরের বাজারে ফারুকের চায়ের দোকানে আদিল মাহমুদসহ আরো কয়েকজন বসে চা পান এবং গল্প করছিল। একপর্যায়ে সিএনজিঅটোরিক্সাযোগে মুখোশ পরিহিতসহ প্রায় ২৫ জন শসস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে প্রথমে এলোপাথাড়ি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। প্রাণে রক্ষার জন্য আদিল ভোরের বাজারের দক্ষিণ পূর্ব পার্শ্বের আকাশ মিয়ার বাড়িতে দৌড়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে, চাইনিজ কুঠার, রামদা ও চুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাতœকভাবে আহত করে। পাশাপাশি তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হাত ও পায়ের রগও কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে চলে যায়। এসময় স্থানীয়রা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা সদরের মাতৃকা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলাটির শুনানি চলছে। সাক্ষী গ্রহনের পর বিচারকাজ শুরু হবে। আশা করছি ঘটনায় জড়িত আসামীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here