ভোটার তালিকা হালনাগাদ আইন পাসের আগে বিএনপির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ‘বাগ্যুদ্ধে’ জড়িয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা এই আইন করা নিয়ে বলেন, ‘যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়, সেই দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কি প্রয়োজন?’ জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘বিরোধী দলীয় সদস্যরা যা বলেছেন আমি কিন্তু আশ্চর্য হই নাই। একদম আশ্চর্য হই নাই। ওনাদের তো ভোট করার অভ্যাস নেই। ওনারা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেন।’ রবিবার বিকেলে সংসদ অধিবেশনে ভোটার তালিকা সংশোধন বিল-২০২০ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। পরে আইনটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এ নিয়ে কথা বলেন। জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রয়োজন হয় যখন মানুষ ভোট দিতে পারে। যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়, ভোটে পুলিশ প্রশাসন, ক্যাডার বাহিনী, যে দেশের মৃত মানুষ কবর থেকে উঠে এসে ভোট দেয়। যে দেশে খুশিতে ঠেলায় ভোট দিতে ভোটাররা লাইনে দাঁড়ায় সেই দেশে ভোটার তালিকা থাকা বা না থাকা কি আসে যায়? এছাড়া ক্ষমতাসীন আস্থাভাজন ছাড়া যেহেতু প্রায় কেউ ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারে না। সেহেতু ভোটার তালিকায় তাদের নাম নির্ভুলভাবে আসলেই চলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের করের টাকা বাঁচাতে মানুষ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে অলীক স্বপ্নে আশাহত না হয় এ প্রোপটে হালনাগাদ দূরে থাকুক; আদৌ প্রয়োজন আছে কি না সেটা জনমত যাচাই করা হোক।’ আরেক এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ভোটার তালিকার প্রয়োজনটা কি? আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব, এটার জন্যই তো ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। হালনাগাদ করে আমাদের কি হবে? যদি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে না পারে। ভোটাররা যদি ভোট দিতে যেতে না পারে, তাহলে ভোটার তালিকা করে কি হবে? এ নিয়ে জনমত যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন আছে?’ এসবের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলীয় সদস্যরা যা বলেছেন আমি কিন্তু আশ্চর্য হই নাই, একদম আশ্চর্য হই নাই। ওনাদের তো ভোট করার অভ্যাস নাই, ওনারা করলেন ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার। ওনারা তো এই কথা বলবেন। ওনারা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার ছাড়া নির্বাচন করলেন। এই হচ্ছে ওনাদের নিয়ম-কানুন। ওনারা আইনের দীা দিচ্ছেন। ওনাদের ধন্যবাদ দেই।’ আমরা জনগণের কথা বলি, জনস্বার্থ দেখি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইনটা ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয়েছে, এই আইন ২০০০ সালে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আসছে। আমরা আইনে প্রণয়ন করছি। ওনারা তো দেখেন না, সারা বছরই ভোটার তালিকা কার্যক্রম হচ্ছে। ভাঙা রেকর্ডের মতো পুরনো কথা বলেন। ওনারা তো এনালগ, ডিজিটাল না।’ এর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়সীমা ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৬০ দিন নির্ধারণ করে ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) আইন-২০২০’ নামে জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস করা হয়। গতকাল রবিবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি উত্থাপন করলে তা কন্ঠভোটে পাস হয়।