রাতভর ঘুমাতে পারেনি সেই মুসলিম শিশুটি, নেয়া হয়েছে হাসপাতালে

45

 

ক্লাসের সেই ঘটনা কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না ভারতের মোজাফফরনগরের মুসলিম শিশুটি। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না। বার বার শিক্ষিকার ‘অমানবিক আচরণ’ তার মনে পড়ছে। কিভাবে একের পর এক সহপাঠী তাকে থাপ্পড় মেরেছে! তা চোখের সামনে ভেসে উঠছে! রাতভর ছটফট করেছে সাত বছরের শিশুটি। সন্তানের এই অবস্থা সহ্য করতে পারেননি মা-বাবা। রোববার সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন তারা।

 

সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, ‘ওই ঘটনায় শিশুটি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে। এছাড়া বার বার ঘটনা সম্পর্কে মানুষ জানতে চাওয়ায় এবং সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করায় সে খুব বিরক্ত।’

শিশুটির মা-বাবা পিটিআইকে জানান ‘ঘটনার পর বাসায় এসে সে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু রাতভর ঘুমাতে না পারার কথা সকালে জানালে আমরা ওকে নিয়ে মিরাটে যাই ডাক্তার দেখাতে।’

এদিকে ওই ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকা তৃপ্তি ত্যাগী সেদিনের ঘটনার জন্য মোটেও লজ্জিত নন বলে জানিয়েছেন।

অপরদিকে শিশুটির বাবা ওই স্কুলে সন্তানকে আর পড়াবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।

কী ঘটেছিল সেদিন?

গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামের নেহা পাবলিক স্কুলে হোমওয়ার্ক না করায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মুসলিম শিশুটিকে তার সহপাঠীদের দিয়ে থাপ্পড় মারা হয়। স্কুলের অধ্যক্ষ তৃপ্তি ত্যাগী সাত বছর বয়সী শিশুটিকে থাপ্পড় মারার জন্য তার সহপাঠীদের নির্দেশ দেন। শিশুটি কান্নাকাটি করলেও তার সহপাঠীরা একের পর এক থাপ্পড় মারে।

এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে ওই ছাত্রকে জোরে আঘাত করার জন্য শিশুদের নির্দেশ দিতে শোনা যায় শিক্ষিকাকে। তিনি ওই স্কুলের অধ্যক্ষও।

এই ঘটনার পর নেহা পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা তৃপ্তি ত্যাগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীকে অন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে মারধরের এই ঘটনায় তার সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে ‍তৃপ্তি ত্যাগি বলেছেন, তিনি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এমন নির্দেশ দেননি। শিশুটি হোমওয়ার্ক না করায় তাকে থাপ্পড় মারতে কিছু শিক্ষার্থীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিনি পরে বলেন, এই ঘটনায় তিনি লজ্জিত নন।

এদিকে ওই ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মাঝে রোববার স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ পাঠিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।

বন্ধ থাকার কারণে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনার ক্ষতি না হয়, সে জন্য তাদের কাছের স্কুলগুলোতে ভর্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই নোটিশে। এ কাজে সহায়তা করবেন শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here