রাসেলকে ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইনের টিকিট বিক্রি বন্ধ

435

গ্রিন লাইন বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষকে আগামী ১০ এপ্রিল (বুধবার) পর্যন্ত সময় দিয়েছে হাইকোর্ট। এরমধ্যে তা পরিশোধ না করলে ১১ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি না করার নির্দেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত।

আদালত বলেছেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হলে ১১ তারিখ গ্রিন লাইন পরিবহনের কোনো বাসের টিকিট বিক্রি করা যাবে না। তাদের সব গাড়ি জব্দ করা হবে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে তা আজ বুধবার আদালতে জানানোর কথা ছিল।

এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে আদালত বলেছে, যত বড় ‘বিজনেসম্যান’ হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সব গাড়ি জব্দ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেওয়া হবে।

শুনানির শুরুতে রিটের পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহনের কেউ কোনো যোগাযোগ করেননি, টাকাও দেননি। তাদের মালিককে সশরীরে হাজির করানোর নির্দেশনা চান তিনি।

এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী অজিউল্লাহ আদালতকে বলেন, আমি সব সময় তাদেরকে আদালতের আদেশ জানিয়ে এসেছি।

আদালত বলেন, এর মালিক কে? অজিউল্লাহ বলেন, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। আদালত জানতে চান, কোথায় আছেন এবং কবে আসবেন? অজিউল্লাহ বলেন, আমি জানার চেষ্টা করছি।

আদালত বলেন, ব্যবসা তো বন্ধ নেই, ব্যবসা তো চলছে? ম্যানেজারকে ডাকেন। ম্যানেজারের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু না পেলে আমরা গ্রিন লাইন পরিবহনের সব বাস জব্দ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করব। আমরা সব স্টপ করে দেব। একটা সীমা থাকা দরকার। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যাননি।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ অজিউল্লাহ।

গত ৩১ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগের আদেশে।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে গত রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেয়।

গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

আইনজীবী শামসুল হক রেজা বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারের চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে গত বছরের ১৪ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন।

এরপর হাইকোর্ট রুলের শুনানি নিয়ে ভিন্ন একটি বেঞ্চ রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারের চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here