সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজলো আর রোদে শুকালো সালেহ আহম্মদের মরদেহ

226

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাই উপজেলার ৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কালা মিয়া বাড়ির সালেহ আহাম্মদ মারা যান চট্টগ্রাম শহরে। মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসেন তার ভাই নুর আহম্মদ। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসী কেউ এগিয়ে আসেনি।

শেষপর্যন্ত এগিয়ে এলো ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামে একটি সংগঠন। করোনা পরিস্থিতিতে গঠিত এই সংগঠনের সদস্যরা সালেহ আহম্মদের কাফন দাফন সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ৫নং ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কালা মিয়ার বাড়ির সালেহ আহম্মদ দীর্ঘদিন কুয়েতে থাকার পর করে ২বছর আগে দেশে এসে চট্টগ্রাম শহরে পরিবার নিয়ে থাকেন। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর জ্বর কাশি ছিল। এরমধ্যে তাঁর ভাইয়ের ছেলের পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সবাই ওই নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত ছিল। বাসার মধ্যে একা ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ৩টায় তিনি মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে গেছেন আরেক ভাই নুর আহম্মদ। স্ত্রী, ভাতিজারা কেউ লাশের সাথে গ্রামের বাড়ি যেতে রাজি হননি। বুধবার ভোরে এ্যম্বুল্যান্স যোগে ভাইয়ের লাশ নিয়ে একাই শহর থেকে আসলেন নুর আহম্মদ। গ্রামে আসার পর বড় বিপত্তি, লাশের সাথে পরিবারের কোন সদস্য না আসায় বাড়ির কোন লোকও এগিয়ে আসছেনা। গ্রামবাসী তো এগিয়ে আসা দুরের কথা, উল্টো গ্রামে লাশ দাফন করতে বাঁধা দিচ্ছেন। নুর আহম্মদ পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। এভাবে কেটে গেল পুরোদিন। এরমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজেছে সালেহ আহম্মদের নিথর দেহ! পরে বিকেলে খবর পেয়ে ছুটে যান ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামের সংগঠনের সদস্যরা। লাশের গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করেন তারা।

এই বিষয়ে ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক জানান, বুধবার ভোরে একটি এ্যম্বুল্যান্স যোগে মৃত সালেহ আহম্মদের লাশ বাড়ি নিয়ে আসেন তার ভাই। লাশটি রেখে দ্রুত চলে যায় এ্যম্বুল্যান্সটি। এছাড়া লাশের সাথে স্ত্রী সন্তান কেউ না আসায় এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে যান। এজন্য কেউ পাশে যায়নি। তিনি আরো জানান, সালেহ আহম্মদ কুয়েত থাকতেন। গত কয়েক বছর আগে দেশে এসে পরিবার নিয়ে শহরে থাকতেন। তিনি দুইবার ষ্ট্রক করেছিলেন। সর্বশেষ শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের মাধ্যমে সালেহ আহম্মদের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক নুরুল আলম জানান, ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের সালেহ আম্মদের লাশ পড়ে থাকার খবর আসে। এরপর আমাদের সংগঠনের ওচমানপুর ইউনিয়নের সদস্যরা দ্রুত গিয়ে লাশের গোসল, কাফন দাফন সম্পন্ন করেছেন। তিনি আরো জানান, করোনা মহামারির সময়েই আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংগঠনটির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে কোনো লোক মারা গেলে তাদের কাফন দাফন সম্পন্ন করা। এ ক্ষেত্রে তাদের খবর দিলেই সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে নিজ খরচায় সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here