‘১৭ বার জেল খেটেছি, তোকে পিটিয়ে না হয় আমি আরেকবার জেলে যামু’-কো-পাইলটকে বিমান যাত্রী

188

পাইলটকে দেখে নেয়ার হুমকি বিমানযাত্রীর
মনির হোসেন

মদিনা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকাগামী একটি ফ্লাইটে কো-পাইলটের সাথে যাত্রীর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হুমকি দেয়ার জের ধরে একপর্যায়ে যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকেই নামিয়ে নিয়ে যান সিকিউরিটির সদস্যরা। এর আগে উড়োজাহাজে কো-পাইলটের সাথে তর্কবিতর্কের সময় যাত্রী কো-পাইলটকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে মদিনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজারের কাছে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি বিমানের প্রশাসন ও যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মদিনা স্টেশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১০টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এযারলাইন্সের (বোয়িং-৭৭৭-৩০০) ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা। কিন্তু ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের সোয়া এক ঘণ্টা পর রাত ১১টায় ৩৪০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছেড়ে আসার আগেই হোল্ডিং লাউঞ্জে অন্য যাত্রীদের সাথে উড়োজাহাজে উঠার অপেক্ষা করছিলেন যশোরের বাসিন্দা টুকুন জাহিদ হোসেন নামে একজন যাত্রী। এ সময় সেখান দিয়ে উড়োজাহাজে উঠার জন্য যাচ্ছিলেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন মাকসুদ ও ফাস্ট অফিসার সালেক। তখন যাত্রী টুকুন ফাস্ট অফিসারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বিমানের ফ্লাইটটি কি নির্ধারিত সময়ে ছাড়বে?

জবাবে কো পাইলট সালেক তাকে বলেছিলেন, ‘এটি গ্রাউন্ড অফিসার যারা তারা বলতে পারবেন। এ কথা বলে তিনি চলে যান। এরপর কিছুক্ষণ পর যাত্রীদের উড়োজাহাজে উঠার আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিমানে উঠার পর আবারো ওই যাত্রীর সাথে কো-পাইলটের দেখা হয়। তখন আবারো তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে প্যাসেঞ্জার কো-পাইলটকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘১৭ বার জেল খেটেছি, তোকে পিটিয়ে না হয় আমি আরেকবার জেলে যামু’। একইসাথে অশালীন মন্তব্য করে বলতে থাকেন, তোদের ‘এমডিকে আমি চিনি, কিছুক্ষণ আগে ফোন করেছি’। কো-পাইলট সালেক যাত্রীর আচরণের পুরো ঘটনাটি জানিয়ে ক্যাপ্টেন মাকসুদের কাছে রিপোর্ট করেন। তখন ক্যাপ্টেন ওই যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে অফলোড করার নির্দেশ দেন এবং তাকে অফলোডের কারণ উল্লেখ করে পাইলট হ্যান্ডনোট স্টেশন ম্যানেজার মাহাবুবের কাছে দিয়ে ফ্লাইট নিয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে মদিনা ত্যাগ করেন। সোমবার রাত ৩টায় ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে।

ওই ফ্লাইটের একজন যাত্রী এসব ঘটনা জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, পরবর্তীতে ওই যাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য ঢাকায় বিমানের বলাকা ভবন থেকে পরিচালক (ট্রাফিক) আতিক সোবহানসহ বিমানের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পাইলটদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু পাইলট তাদের অনুরোধ রাখতে অগারগতা প্রকাশ করেছিলেন।
গতকাল রাতে পরিচালক আতিক সোবহানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গতকাল শুক্রবার রাত ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেন কো-পাইলটকে হুমকি দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যাত্রী ফিরতে পারছেন কি না সেটা বলতে পারব না, তবে পাইলট তার লগে লিখেছেন, যাত্রী হোল্ডিং লাউঞ্জে ফাস্ট অফিসারকে জিজ্ঞেস করছেন যে, এয়ারক্রাফট লেট হবে কি না। ফাস্ট অফিসার বলছেন, গ্রাউন্ড সার্ভিসের যারা আছেন তারা বলতে পারবেন কতক্ষণে কী করবেন। এটা বলার পর উনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এয়ারক্রাফটে উঠে উনি কেবিন ক্রুকে বলছেন, আমি কতবার জেল খেটেছি, তোকে মেরে আবার আমি জেল খাটব। ক্রু সেটা পাইলটকে জানিয়েছেন। তখন কিন্তু এ বিষয়টি সেফটি হ্যাজার্ড। তিনি বলেন, একজন প্যাসেঞ্জার অস্বাভাবিক আচরণ করেছেন তাতে সেফটি হ্যাজার্ডের কারণে ক্যাপ্টেন মনে করেছেন এয়ারক্রাফটে যদি ওই যাত্রী অ্যাটাক করে বসেন! সে কারণে তাকে আনতে রাজি হননি তিনি। তখন সিকিউরিটি তাকে অফলোড করছে। ওই যাত্রীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জানি না। ক্যাপ্টেন তার লগ বইতে এ কথাই শুধু লিখেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here