হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ২০ বছর পর মায়ের বুকে ফিরে গেল আসমা। রোববার দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হোসেন কচি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আসমাকে তার মা রোকাইয়া বেগমের বুকে ফিরিয়ে দেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল।
২০ বছর আগে ২০০১ সালে চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়া জোহরা খাতুন আসমা নামের শিশুকে এক পরিবার বাসায় কাজ করাতে পথ থেকে নিয়ে যায়। এক দিন মারধর করলে সে আবার ওই বাসা থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। পরে নোয়াখালীর ফেরদৌসী নামে একজন কান্নারত আসমাকে কয়েক দিন নিজের কাছে রাখেন। কিন্তু কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না দেখে তিনি আসমাকে নিয়ে আসেন নিজের এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাছপুর গ্রামে।
তারপর নিয়তি তাকে বিভিন্ন জায়গায় টেনে নিয়েছে। পাঁচ বছর ছিল নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এরপর আরো দুই বাসায় আরো ছয় বছর থেকে পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায় ফিরে আসে। ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী ফাতেমা জোহরা সীমা তার বাবার বাড়ি একলাছপুরে পাঠিয়ে দেন আসমাকে।
তখন সীমার বাবার বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছিল। ডানপিটে আসমার সাথে এক নির্মাণ শ্রমিকের হৃদয়ের আদান-প্রদান ঘটলে তারা পালিয়ে যায় চট্টগ্রামে। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ের জন্ম দেন আসমা। সংসারে কখনো সুখে কখনো স্বামীর অত্যাচারে জীবন বয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ স্বামী প্রবাসে চলে গেলে আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসেন আসমা। আশ্রয় নেন পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায়।
এবার জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ফিরে আসা আসমার শেকড়ের খোঁজ কীভাবে পাওয়া যায় তার জন্য ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী সীমা নোয়াখালীর সিনিয়র সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান। সূত্র ছিল নড়াই গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এটুকুই।
সাংবাদিক মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের বিটিভি ও ইত্তেফাক প্রতিনিধির মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে। আসমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নড়োই গ্রামের রোকাইয়া বেগমের মেয়ে।
রোববার দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হোসেন কচি মিলনায়তনে পুনএকীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আসমাকে তার মা রোকাইয়া বেগমের বুকে ফিরিয়ে দেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল।
অনুষ্ঠানে জেলার সিনিয়র সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও ব্রাইটার্স টিম অফ বাংলাদেশ নোয়াখালী জেলা শাখার উপদেষ্টা নুসরাত জাহান, সিনিয়র সাংবাদিক মনিরুজ্জামান চৌধুরী, নোয়াখালী পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান শামীম।
এসময় আসমাকে আশ্রয় দাতা ফরহাদ কিসলু, তার স্ত্রী ফাতেমা জোহরা সীমা এবং নবীনগর উপজেলার নড়োই গ্রামের সমাজপতি মো. তাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আসমাকে ফিরে পেয়ে হাউ-মাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মা রোকাইয়া বেগম ও ছোট বোন রানু বেগম। এসময় আসমাও আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ে।