আজ সবার সব পথ এসে মিলবে এক অভিন্ন গন্তব্যে। সেই গন্তব্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহ্যের মিনার। ভেদাভেদ ভুলে নারী, পুরুষ বসন্তে ফোটা ফুলের স্তবক হাতে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাবে মিনারের দিকে। কণ্ঠে থাকবে চির অমøান সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…’ ভাষা শহীদদের প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে নিবেদিত শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে বর্ণিল হয়ে যাবে শহীদ মিনারের বেদি। আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিবসটি উপলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ উপলে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। : আজ থেকে ৬৭ বছর আগে বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রার্থে ১৯৫২ সালের এ দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বারদের আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। তাদের রক্তে শৃংখলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা- বাংলা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। : মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানের এ অনন্য ঘটনা স্বীকৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজ বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হচ্ছে। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দেশের সর্বত্রই আজ প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। : একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই শহীদ মিনারে শুরু হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন। বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে, খালি পায়ে আবাল-বৃদ্ধ সবাই শামিল হবেন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশের স্কুল-কলেজ, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। : একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। দুর্জয় সাহস জুগিয়েছে। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’- চিরকালের এ স্লোগান আজও সমহিমায় ভাস্বর। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির বাণী : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমি ৫২’র ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিতার কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাদের পরিবারের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাদের রুহের মাগফিতার কামনা করি। অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে ভাষা শহীদগণ আমাদের প্রেরণার উৎস। মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আত্মত্যাগের যে গৌরবদীপ্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধে। প্রতিষ্ঠিত করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনা পরিপূর্ণতা দান করেছিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। সেই চেতনা নস্যাৎ করে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর আজ জনগণের কাঁধের ওপর চাপানো হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের নির্বাচনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে-যা খোলাখুলি কারচুপির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্রকে সমাহিত করে এই দুঃশাসন দীর্ঘায়িত করতে অবৈধ শক্তির জোরে সাজানো মিথ্যা মামলায় জনগণের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়েছে। : তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- একুশের চেতনার উত্তরাধিকারী হয়ে এদেশের সংগ্রামী মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও মৃতপ্রায় গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে অতিশিগগির বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবোই ইনশাল্লাহ। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদের মহিমান্বিত অবদানের কারণে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করে তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যাতে সমৃদ্ধ সংস্কৃতিসম্পন্ন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। : শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপি : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলে একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় কালো ব্যাজ সহকারে রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলের সামনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দলীয় সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের জমায়েত এবং আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের মাজার জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যাত্রা ও শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতি বছর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতেন। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে যাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা।