মিরসরাই প্রতিনিধি
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়ার্ড ইউনিয়ন কাউন্সিল শেষ করেছে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামীলীগ । এবার উপজেলার নেতৃত্বের অপেক্ষায় নেতাকর্মি ও সমর্থকরা। উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল আগামী ১৬ নভেম্বর। মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ওই সম্মেলনকে ঘিরে পুরো উপজেলার তৃনমুলের নেতা কর্মি আর সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কে হচ্ছেন আগামীর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এবং উপজেলার প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জ ও হাট বাজারে সাধারন মানুষের মাঝেও একই কৌতুহল দেখা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের অভিভাবক আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উন্নয়ন মূলক কাজকর্মে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে এবং দলের তৃনমুল পর্যায়ে সাংগঠনিক ভিত্তি আরো মজবুত করতে সক্ষম হবে এমন নেতৃত্বই আসবে উপজেলা কমিটিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইতমধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সভাপতি পদে শুধুমাত্র একজনের নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে কৌতুহলটা বেশি কাজ করছে নেতা কর্মিদের মাঝে।
সাধারণ সম্পাদক পদে কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও সম্ভাবনার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ৪নং ধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া ও ১নং করেরহাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন। বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর অনুসারীদের নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না ঘটলে এ দুইজনের একজনই হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী সদস্য বলেন, সম্মেলনে নাম ঘোষনার এক মিনিট পূর্বেও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেনা কে হচ্ছেন সভাপতি সম্পাদক। প্রিয় নেতার শেষ নির্দেশনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সম্মেলনে নাম ঘোষনার পর নির্ধারিত হবে কে আগামীর সভাপতি সম্পাদক। অবশ্যই সভাপতির বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলছেন একাধিক নেতা।
.
জাহাঙ্গীর ভূইয়ার অনুসারীদের মতে, একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া সবসময় দলের বিশ্বস্ত হিসেবে নিবেদিত প্রাণ। দল থেকে তাঁর পাওয়ার কিছু নেই। তিনি দলকে দেবার অনেক কিছুই আছে। যা তিনি গত দেড় যুগেরও বেশি সময় দলকে দিয়ে এসেছেন।
নিজ এলাকা ধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাথে একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে যুক্ত করে স্থানীয় রাজনীতিকে দুর্বত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে তিনি প্রত্যক্ষ ভোটে ধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তাঁর দায়িত্ব পালন কালে ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থ মন্ত্রী শাহ এসএম কিবরিয়াকে নির্মমভাবে খুন করা হলে স্থানীয়ভাবে তিনিই প্রথম প্রতিবাদ করেন। ওইসময় বিএনপি জামায়াত জোটের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালায় এবং তিনি গুরতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১০ বছর সফলতার সাথে ধুম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে সমগ্র উপজেলা রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে দলের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে আবারো প্রত্যক্ষ ভোটে ধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এবারও সফলতার ফুলঝুরি তাঁর হাতে। দীর্ঘ ৭ বছর অত্যন্ত নিখুঁতভাবে দলের দায়িত্ব পালন করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আস্থার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছান।
২০১১ সালে ধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল থেকে একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার নাম ঘোষণা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে মরহুম তারেক ইসমত জামশেদী দল থেকে নির্বাচন করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালে আবারো দল থেকে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচনে মনোনয়ন পান। অবশ্য সেবার তাঁর নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশ তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। পরবর্তীতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবনে একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া অত্যন্ত সুখি একজন মানুষ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ সন্তান। পেশায় তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাঁর বাবা মরহুম নজির আহম্মদ ভূঁইয়া ছিলেন একজন চাকুরীজীবি।
.
অপরদিকে এনায়েত হোসেন নয়নের সমর্থকরা জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা নয়ন করেরহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম রফিক আহম্মদ প্রকাশ চট্টু চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ সিএনসি জাফরের নাতি।
চেয়ারম্যান নয়ন ১৯৮২ সালে তিনি করেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন । করেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন তিনি। ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ সালে রাজধানীর মিরপুর আইন কলেজের ভিপি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগের মোহাম্মদ আলী-নুরুল হুদা কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও স্কুল জীবন থেকে প্রায় ২৮-৩০ বছর ধরে আমার প্রিয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একজন আস্থাভাজন কর্মী হিসেবে তার সানিধ্যে গিয়ে প্রিয় নেতার সকল প্রকার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও কর্মকান্ড সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে ছিলেন তিনি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের অভিভাবক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র স্বপ্নের আধুনিক ও পরিকল্পিত মিরসরাই গঠনে এনায়েত হোসেন নয়নকে সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য দাবিদার বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা।
তবে তৃনমূল কর্মিরা মনে করেন, দলের নেতৃত্বে যারাই আসুক। নেতা কর্মিদের পাশে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই প্রত্যাশা।