বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দ্য ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনস (ফিকা)। ফিকা ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।
গত সোমবার (২১ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে, জাতীয় লিগের পারিশ্রমিক বাড়ানো, কোয়াবের বর্তমান কমিটির পদত্যাগসহ ১১টি দাবি তুলে ধরেন সাকিব-মুশফিক-নাঈমসহ দেশের সিনিয়র ক্রিকেটাররা। সংবাদ সম্মেলনে ১০ জন ক্রিকেটার ১১টি দাবি তুলে ধরেন।
অন্যদিকে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকার পরিপ্রেক্ষিতে আজ সংবাদ সম্মেলনে ষড়যন্ত্রের কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কিছুদিন পর সব প্রকাশ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে যে দাবিগুলো উপস্থাপন করেন ক্রিকেটাররা:
প্রথম দাবি তুলেন নাঈম ইসলাম, ‘কোয়াব (ক্রিকেটার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) নিয়ে কি নির্বাচন হবে, কে প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি হবেন- তা আমরা ক্রিকেটাররা বাছাই করবো।’
দ্বিতীয় দাবি তুলে ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে জানেন প্রিমিয়ার লিগের পরিস্থিতি কি। এটা নিয়ে কম বেশি সবাই অসন্তুষ্ট। এখানে পারিশ্রমিকের একটা মানদণ্ড বেঁধে দেয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের অনেক লিমিটেশন দেয়া হয়েছে। আগে যেমন ছিল, তেমনটা নেই। খেলোয়াড়রা আগে বাছাই করতে পারতো, কোন দলে খেলবে, পারিশ্রমিক কেমন হবে। আমাদের দাবি হলো আগের মতো যেন প্রিমিয়ার লিগটা ফিরে পাই।’
তৃতীয় দাবি তুলে ধরে সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল নিয়ে। আমরা জানি, এ বছর বিপিএল অন্য রকম হচ্ছে। সেটা অবশ্যই রেসপেক্ট করি। আমাদের প্রধান দাবি হলো, আগের নিয়মের বিপিএল যেন আগামী বছর থেকে চলে আসে। আর মূল দাবি হলো, বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়ররাও যেন ভালো পারিশ্রমিক পায়। বিশ্বে অনেক ফ্র্যাঞ্জাইজি লিগ হয়, খেলোয়াড়রা তাদের ড্রাফট বেছে নিতে পারে, কোন গ্রেডে থাকবে। এমনটাই হওয়া উচিত, তারপর যদি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি না নিতে চায় সেটা আলাদা ব্যাপার।’
চতুর্থ ও পঞ্চম দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, ‘চতুর্থ দাবি হলো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি। আমরা সবাই মনে করি, সেটা এক লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন পঞ্চাশ ভাগ বাড়াতে হবে। খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে, সেটা জিম ইনডোর মাঠ- সব জায়গাতেই। ১২ মাস কোচ, ফিজিও, ট্রেনার রাখতে হবে; তারাই আসলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের একটা পরিকল্পনা দেবেন। আমরা বুঝি, এটা হয়তো আজই হবে না। তবে আগামী মৌসুম থেকে যেন হয়, প্রতিটি ডিভিশনে।’
পঞ্চম দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যার যার হোম ভেন্যুতে প্র্যাকটিসের সুযোগ পাবে। আমাদের টেস্ট ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটের কালচারটা ভালো করতে হলে। প্রথম হলো বল। আমরা যে বলে খেলি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গেলে সেটা আলাদা হয়। খেলোয়াড়দের প্রতিদিনের ভাতা ১৫০০ টাকা, এটা হতে পারে না। তাদের ফিটনেস লেভেল দাবি করছে বিসিবি, সেটা মেইন্টেন করতে এই টাকার খাবারে হবে না। তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ভালো হোটেলে থাকতে হবে, তার জন্য টাকার দরকার আছে। বড় ইস্যু আছে ট্রাভেল। ধরেন, একটা ছেলে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার যাবে। তাকে ২৫০০ টাকা দেয়া হচ্ছে যাওয়ার জন্য। বাস ছাড়া সে কিভাবে যাবে? তাদের বিমান দেয়া উচিত। টিকিটটা ডিভিশন করে দিক, আপত্তি নেই। আর ওয়ান স্টার, টু স্টার হোটেলে কোনোরকম রুম আছে, এমন হোটেলে খেলোয়াড়দের থাকা সম্ভব নয়। কারণ, চারদিনের ম্যাচ খেলে ফ্রেশনেসের জন্য হোটেলে কমপক্ষে একটা জিম, একটা সুইমিংপুল থাকা উচিত। আরেকটা হলো বাস। আমরা মাঠে কি ধরনের বাসে কিংবা কিভাবে যাই- আসলেই সেটা হতাশাজনক। কমপক্ষে একটা এসি বাস দেয়া উচিত।’
ছয় নাম্বার পয়েন্ট তুলে ধরে এনামুল হক জুনিয়র বলেন, ‘ছয় নম্বর পয়েন্ট হলো, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেটা ৩০ জন করা উচিত। বেতন অনেক দিন ধরে বাড়ানো হয় না, সেটা বাড়াতে হবে।’
সাত নম্বর দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ক্রিকটে দলের ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘শুধু ক্রিকেটারদের ব্যাপারই নয়। গ্রাউন্ডসম্যানদের দেখেন, বিসিবিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে মাস শেষে ৫ বা ৬ হাজার টাকা পায়। কোচের কথা বলেন। আমরা নিজেরাই বাংলাদেশি কোচদের দাম দিচ্ছি না, বিদেশি কোচদের বেতন আমাদের ২০টা কোচের বেতনের সমান। দেখুন, সম্প্রতি একটা সফরে দেখবেন বাংলাদেশের কোচের অধীনে দল ভালো করেছে; কিন্তু পরের সফরেই তিনি নেই।’
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘আম্পায়ারিং নিয়ে সমালোচনা আছে; কিন্তু আপনারা জানেন, আম্পায়ারিংকে পেশা হিসেবে নিতে হলে তাদের তো একটা আর্থিক সিকিউরিটি দিতে হবে। সেটা দেয়া হয় না। সব মিলিয়ে আমাদের মূল দাবি, বাংলাদেশিদের যেন প্রাধান্য দেয়া হয়।’
৮ নম্বর দাবি আসে এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পয়েন্ট নম্বর আট হচ্ছে- ঘরোয়া লিগে দুইটা চারদিনের টুর্নামেন্ট খেলি, বিসিএল আর এনসিএল। প্রিমিয়ার লিগে মাত্র একটা খেলি, আরেকটা টুর্নামেন্ট বাড়ানো উচিত। মনে হয় বিপিএলের আগে একটা টি-টোয়েন্টি লিগ খেলা উচিত। ওয়ানডের কথা বললে, আগে চারদিনের ম্যাচের পর আমরা পঞ্চাশ ওভারের একটা ম্যাচ খেলতাম। আমরা চাই, ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগে একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্ট চালু হোক, যাতে আমরা আরও ওয়ানডে পাই, খেলার সুযোগ পাই।’
৯ নম্বর দাবি তুলে ধরেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। তিনি বলেন, ‘পয়েন্ট নম্বর নয় হলো ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য আমাদের একটা ফিক্সড ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাহলে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারব প্রতি বছর।’
১০ নম্বর দাবি আসলো জুনায়েদ সিদ্দিকীর কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘দশ নম্বর পয়েন্ট হলো-
বিপিএলে প্রিমিয়ার লিগের যে বকেয়া টাকা সেটা যেন নির্দিষ্ট সময়ে পাই। যেমন গত বছর দশটি দল টাকা ক্লিয়ার করেছে; কিন্তু আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নের ৪০ পারসেন্ট টাকা পাইনি। বোর্ডে অনেকবার গিয়েছি, ক্লাবকেও নক করা হয়েছে। জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা এটা ডিজার্ভ করি না, এটা খুবই দৃষ্টিকটু। এমন যেন না হয়।’
১১ নম্বর দাবি নিয়ে হাজির হন ফরহাদ রেজা। তিনি বলেন, ‘পয়েন্ট নম্বর এগারো। দুইটার বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলা যাবে না। যদি আমরা জাতীয় দলের ডিউটি থেকে ফ্রি থাকি, তবে যেন আরও খেলতে দেয়া হয়। তাহলে আমরা অনেক শিখতে পারব।’
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় দলের ক্যাম্প ও জাতীয় লিগসহ কোনো ধরনের খেলায় অংশ নেবেন না ক্রিকেটাররা। যার ফলে হুমকির মুখে পড়লো বাংলাদেশের ভারত সফর। তবে বয়সভিত্তিক দল এই আন্দোলনের বাইরে থাকবে বলে জানানো হয়।