|
চট্টগ্রাম: নগরের অভিজাত এলাকা খুলশী ও নাসিরাবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছিনতাইকারীদের নতুন ‘টানা পার্টি’। এ ‘টানা পার্টির’ টার্গেট কেবল রিকশা আরোহী নারী যাত্রী। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যবহার করে এসব ছিনতাই করেন ‘টানা পার্টির’ সদস্যরা।
একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রের সন্ধান পান নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ চক্রে রয়েছে ১৫ জনের মতো স
দস্য। এদের কয়েকজন বিভিন্ন সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। কয়েকজন কারাগারে গেলে এ চক্রের অন্যরা সক্রিয় হন। এ চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে জাকির, ইউসুফ, দিলীপ, আলাউদ্দিন, নাগর পন্ডিত, মোস্তফা, সেলিম, লম্বা ইউসুফ, বেলাল, শাহজাহান ও নুরল হক প্রকাশ সজীব।
জানা যায়, নগরের খুলশী ও নাসিরাবাদকে কেন্দ্র করে সক্রি
য় ছিল ১১টির মতো ছিনতাইকারী গ্রুপ। কয়েকজন বিদেশি নাগরিক ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতায় কয়েকটি গ্রুপের সদস্যরা গ্রেফতার হন এবং অন্যরা স্থান পরিবর্তন করেন। এ সুযোগে বেলাল, আলাউদ্দিন, শাহজাহান ও নুরুল হকসহ কয়েকজন পুনরায় সক্রিয় হন। তারা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশার আড়ালে এ ছিনতাইয়ের কাজ করে থাকেন। ছিনতাইয়ের জন্য রয়েছে কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা। সিএনজি অটোরিকশা করে এসে রিকশা আরোহী নারী যাত্রীদের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন তারা। নতুন এ গ্রুপের সদস্যরা সবাই সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও ভোলা এলাকার বলে জানা গেছে।
গত ২১ জুলাই নগরের খুলশী থানার ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন মালদ্বীপের নাগরিক ডা. মরিয়ম নাফুজা (২৯)। ছিনতাইকারীরা তার ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাগে একটি আইফোন এক্স, তার মালদ্বীপের জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি ভিসাকার্ড ও নগদ ৫ হাজার টাকা ছিল। ডা. মরিয়ম নাফুজা ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে এমবিবিএস শেষ করে ইন্টার্নশিপ করছেন।
এ ঘটনায় ২২ জুলাই খুলশী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ডা. মরিয়ম নাফুজা। আট দিন পর ৩০ জুলাই অভিযোগটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (০৩ আগস্ট) ভোরে নগরের দেওয়ানহাট মিস্ত্রীপাড়া লাল মসজিদ এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটি (নম্বর-চট্টমেট্রো-থ-১২-১২৪৯) আটক করেন। পরে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্য মো. নুরুল হক প্রকাশ সজীবকে (২৪) গ্রেফতার করেন। এ সময় মো. নুরুল হকের কাছ থেকে ডা. মরিয়ম নাফুজার ছিনতাই হওয়া আইফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ।
মো. নুরুল হক প্রকাশ সজীব নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার পূর্বজোটখালী এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, ডা. মরিয়ম নাফুজা ব্যাগ ছিনতাইয়ে অংশ নেয় মো. নুরুল হক, বেলাল, শাহজাহান ও আলাউদ্দিন। নুরুল হককে গ্রেফতার করতে পারলেও অন্য তিনজন পলাতক রয়েছেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ইলিয়াছ বাংলানিউজকে বলেন, মালদ্বীপের নাগরিক ডা. মরিয়ম নাফুজার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় নুরুল হক নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটি (নম্বর-চট্টমেট্রো-থ-১২-১২৪৯) আটক করা হয়েছে। মো. নুরুল হকের কাছ থেকে ডা. মরিয়ম নাফুজার ছিনতাই হওয়া আইফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, ডা. মরিয়ম নাফুজা ব্যাগ ছিনতাইয়ে অংশ নেয় মো. নুরুল হকসহ চারজন। বাকি তিনজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
মো. ইলিয়াছ বলেন, মো. নুরুল হকসহ ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া অন্যরা সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠিত হয়েছে। তারা নতুন এ গ্রুপের সৃষ্টি করেছেন। পুলিশের তৎপরতায় এর আগে খুলশী ও নাসিরাবাদ কেন্দ্রিক ছিনতাইকারীদের গ্রুপ পালিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এ সুযোগে নতুন করে এ টানা পার্টি ছিনতাই কাজ শুরু করেছে।