

মিরসরাই প্রতিনিধি
নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ড্রেন দিয়ে পানি যাবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয় কালভার্ট। কিন্তু মিরসরাই উপজেলার চরশরৎ এলাকায় কালভাটের এক পাশে ড্রেন থাকলেও অন্য পাশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল ও ঘর বাড়ি। ড্রেনটি ভরাটের খনন করে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর রাখেনি। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের চরশরৎ গ্রামের রাম সিংহের বাড়ির রাস্তার পাশের ড্রেনটি স্থানীয় বিমল মাস্টারের পরিবার মাটি দিয়ে বিগত দুই মাস পূর্বে ভরাট করে ফেলে। ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ডুবে পঁচে যায় ফসলী জমির বোরো ধান সহ বিভিন্ন রবিশষ্য। ড্রেন ভরাটের পাশাপাশি ভরাট করে ফেলা হয়েছে নন্দবাসীর সড়কে সরকারী ভাবে নির্মিত কালভার্টের মুখও।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিতাই চন্দ্র দাশ জানান, ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরৎ এলাকার নন্দবাসীর সড়ক সংলগ্ন রাম সিংহের বাড়ীর পাশের সড়কটি দিয়ে চরশরৎ গ্রামের রাম সিংহের বাড়ী, বনী মাঝি বাড়ী ও ললিত মোহন বাড়ীর অর্ধশত পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক মানুষ যাতায়াত করে। সড়কটি আর এস খতিয়ানে সরকারী খাস হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। বিগত ৪০-৫০ বছর পূর্ব থেকে এ সড়কটি দিয়ে স্থানীয়রা যাতায়াত করে আসছে। সড়কটির পাশে ৪ ফুট প্রশস্ত একটি ড্রেনও ছিলো। ২ মাস পূর্বে বাড়িতে মাটি ভরাটের কথা বলে স্থানীয় বিমল মাষ্টারের পরিবার ওই ড্রেন টি ভরাট করে ফেলে। ড্রেন ভরাটের পাশাপাশি সরকারীভাবে নির্মাণ করা কালভার্টের মুখও মাটি দিয়ে তারা ভরাট করে ফেলা হয়। এতে করে উত্তর পাড়ার বামনসুন্দর খাল থেকে দক্ষিণ পাড়ার ডোমখালী খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উত্তর পাড়ার কৃষি জমিতে রোপনকৃত বোরো ধান, বিভিন্ন রবিশষ্য সহ পানিতে ডুবে পঁচে যাচ্ছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফনীর সময় হওয়া অতিরিক্ত বৃষ্টিতে রাম সিংহের বাড়ী, বনী মাজি বাড়ী ও ললিত মোহন বাড়ীতে পানি উঠে যায়। এতে করে রান্না ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ভাত রান্না করে খেতে কষ্ট হয়ে যায় পরিবারগুলোর। বর্ষাকালে পানিতে উত্তর পাড়ার ডগি ডুবে যাওয়ায় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ড্রেন দখলমুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা ড্রেন অবমুক্ত না করে চট্টগ্রাম আদালতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা মামলা করে।
তিনি আরো বলেন, ইউএনও’র নির্দেশে আমি গত ৩০ এপ্রিল ড্রেন দখলমুক্ত করতে গেলে বিমল মাস্টার সহ তাদের পরিবার শ্রমিকদের কাজে বাধা দেয়। তারা আমাকেও ওই সময় লাঞ্চিত করে।
স্থানীয় কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ ও রাম চন্দ্র দাশ, সবিতা রানী দাশ বলেন, বিমল মাষ্টার ও তাদের পরিবারের লোকজন ড্রেন ভরাট করার পাশাপাশি রাস্তা সংস্কার করতে দিচ্ছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা না গেলে আমাদের বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে থাকবে। স্থানীয় চর শরৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বিমল মাস্টার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন ঝামেলা পাকিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানী করেন বলে অভিযোগ করে তারা। ড্রেন দখলের পাশাপাশি অর্ধশত পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক মানুষের চলাচলে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেয় বলে জানায় স্থানীয় জগদীশ চন্দ্র দাশ।
ড্রেন ভরাটের বিষয়ে বিমল মাষ্টার ও তার মেয়ে চিনু মাষ্টার জানান, আমরা বাড়িতে মাটি দেওয়ার জন্য মাটি কাটার ফলে রাস্তার পাশের ড্রেনটি সৃষ্টি হয়েছে। সেটি আগে চিকন নালার মতো ছিলো। যেটা দিয়ে উত্তর পাড়ার পানি দক্ষিণ পাড়ায় যেত। কিন্তু স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওই নালাটিকে বর্তমানে ৪-৫ ফুট প্রশস্ত ও রাস্তাটিকেও বড় করতে চাইতেছে। তাই আমরা জোরারগঞ্জ থানা ও চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে মামলা করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ভরাটকৃত ড্রেনটি দখলমুক্ত করার জন্য আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছি। ড্রেন ভরাট করার ফলে উত্তর পাড়ার বিলের ধান সহ বিভিন্ন ফসল ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। দখলদাররা যদি ভরাটকৃত ড্রেন পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে না দেয় তাহলে আইনগতভাবে তা দখলমুক্ত করা হবে।

