বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “দেশে এখন ‘শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা’ বিরাজ করছে। গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, পাঁচ শ’র উপরে মানুষ গুম হয়ে গেছে, হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষ তারা আজকে নিহত হয়েছে।”
বুধবার দুপুরে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে জনগণ আজকের দিনে আবার নতুন করে শপথ গ্রহণ করছে যে, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তারা অবশ্যই দেশকে মুক্ত করবে, মানুষের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে এবং গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। তাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এদেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা শপথ গ্রহণ করেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলো একাত্তর সালে সেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তারা দেশ স্বাধীন করেছিলো। সেই দিন যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলো বাংলাদেশের মানুষ, সেই চেতনা ছিলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, ১৯৭৪-৭৫ সালে দেশে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দীর্ঘ ১০ বছর তারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে এবং গণতন্ত্রকে ধবংস করে মানুষের যে মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, তার যে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা তাকে ধবংস করে দিয়ে আজকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করছে। স্বাধীনতার চেতনাকে তারা ধবংস করে দিয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ সব সময় একটি প্রতারনার রাজনীতি করেছে। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেছে কিন্তু কাজে তারা স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের কাছে নীতিনৈতিকতা নেই। তারা সবসময় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সবরকম অনৈতিক কার্যকলাপ করেছে। এখন সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।”
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে না বলেই তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে অপমান করে এবং গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না বলে তারা গণতন্ত্রের নেত্রী, দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আজকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে একটি ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক দলে এবং সরকারের পরিণত হয়েছে।’
সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে ৯টা ৫০ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুম্পমাল্য অর্পণ করেন এবং মরহুম নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আমিনুল হক, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, আকরামুল হাসানসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগরের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, কাজী আবুল বাশারসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে পুস্পমাল্য অর্পন করেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতানা সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, সাদরেজ জামান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, জাসাস শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, কাজী নজরুল ইসলাম শ্রাবন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, পার্থ মণ্ডল, রিয়াদ ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ দলের পক্ষে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ৯টা থেকে নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও সালাম লও সালাম’ শ্লোগান দিয়ে সমাধিস্থলে সমবেত হন।