মিরসরাইয়ে বিয়ের দুই বছর পর মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে মায়ের অপহরণ মামলা!

386


মিরসরাই প্রতিনিধি
মা-বাবা পছন্দ করে আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার দুই বছর পর মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ওই মেয়ে ইসরাত জাহান ইরার মা জেসমিন সুলতানা বাদি হয়ে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় মেয়ের স্বামী মোঃ ইমাম হোসেন রিপন ও তাঁর বড় ভাই মোঃ কামরুল হাসান লিটনকে আসামী করা হয়।
জানা গেছে, মিরসরাই পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল হোসেন সওদাগরের পুত্র ইমাম হোসেন রিপনের সাথে একই উপজেলার শাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের ইসমাইল সওদাগর বাড়ির প্রবাসী হুমায়ুন কবিরের মেয়ে ইসরাত জাহান ইরার সাথে ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর আকদ হয়। দুই বছর পর ইসরাতকে তাঁর স্বামী বাড়িতে নিয়ে যাবে মর্মে বিবাহের ফর্দে উল্লেখ করা হয়। বিয়ের পর মেয়ে তাঁর মা-বাবার সাথে মিরসরাই সদরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। স্বামী রিপন নিয়মিত শশুরের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। ইসরাতের মা-বাবা, স্বামী রিপন সহ একসাথে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গেছেন এবং সবাই মিলে দুজনের বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছেন। বিগত কয়েক মাস ধরে ইসরাতের স্বামী রিপনের সাথে তাঁর মা-বাবার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। তাঁরা রিপকে ডিভোর্স দিতে ইসরাতকে একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ইসরাত স্বামীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়নি। এরপর ইসরাত ও তাঁর স্বামী রিপন মিরসরাই থেকে গিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস শুরু করে। অন্যত্র চলে যাওয়ায় গত ২৯ নভেম্বর ইসরাতের মা জেসমিন সুলতানা ইসরাতের স্বামী ইমাম হোসেন রিপন ও তাঁর বড় ভাই কামরুল হাসান লিটনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় এই দুই অভিযুক্ত তাঁর মেয়েকে কলেজে যাওয়ার সময় উত্ত্যক্ত করতো। গত ২৫ নভেম্বর মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মেয়েকে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে বলে উল্লেখ করেন।


রিপনের বড় ভাই কামরুল হাসান লিটন বলেন, ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শরিয়তের সকল নিয়মনীতি মেনে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আমার ছোট ভাই রিপনের সাথে ইসরাতের আকদ সম্পন্ন হয়। দুই বছর পরে অনুষ্ঠান করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা। উভয় পক্ষের মধ্যে ভালো সম্পর্ক চলছিলো। কিছুদিন যাওয়ার পর ইসরাতের মা আমাক ভাইকে বলে আমি ভেবেছিলাম তোমার কাছে অনেক টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু তেমন কিছুতো নেই। তাকে আমাদের পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁর শশুরদের সাথে থাকার প্রস্তাব দিলে রিপন সেই প্রস্তাব প্রত্যাক্ষাণ করে। এরপর থেকে ইসরাতকে বিভিন্নভাবে রিপনকে ডিভোর্স দিতে চাপ প্রয়োগ করে তাঁর মা-বাবা। একপর্যায়ে ইসরাত রিপনকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু তিনি আদালতে মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।


এই বিষয়ে ইসরাত জাহান ইরা বলেন, একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে কি জন্য অপহরণ করবে! আমাকে আমার মা একাধিকবার রিপনকে ডিভোর্স দিতে চাপ প্রয়োগ করে। আমাকে বলে তোকে আরো ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব, তুই ওকে ডিভোর্স দে। তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী সুখে-শান্তিতে থাকতে বাবার বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে এসেছি। বর্তমানে আমি গর্ভবতি। আমার মা-বাবা পছন্দ করে বিয়ের দেয়ার দুই বছর পর কেন এগুলো করছে বুঝতে পারছিনা।
জানা গেছে, জেসমিন সুলতানা আদালতে মামলা করার পূর্বে তাঁর মেয়ে বর্তমানে বসবাসরত এলাকায় চট্টগ্রাম শহরের খুলশি থানায় অপহরণ মামলা করতে যায়। ১৭ নভেম্বর থানার একজন উপ-পরিদর্শকের উপস্থিতিতে মেয়ের বাবা হুমায়ুন কবির, ইসরাত ও তাঁর স্বামী রিপনকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ইসরাত দুই বছর আগে রিপনের সাথে বিয়ের বিষয়টি ওই উপ-পরিদর্শককে অবহিত করায় খুলশি থানায় মামলা হয়নি।


এই বিষয়ে উপস্থিত থাকা খুলশি থানার উপ-পরিদর্শক রূপক জানান, মেয়ে পক্ষ থানায় মামলা করতে এলে উভয় পক্ষ মিরসরাইয়ের বাসিন্দা হওয়ায় আমি নিজ উদ্যোগে প্রথমে ওদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসি। বৈঠকে মেয়ে তাঁর বাবাকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলেন, আপনারা দুই বছর আগে রিপনের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে এখন অপহরণের নাটক করছেন কেন? তাঁর বাবা তখন কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি। এই বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি। শুনেছি পরে আদালতে নাকি অপহরণ মামলা করেছে।
এই বিষয়ে ইসরাতের মা ও মামলার বাদি জেসমিন সুলতানা বলেন, দুই বছর আগে রিপনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ের কথা ঠিক হয়েছিলো, এখনো বিয়ে হয়নি। রিপন আমার মেয়েকে কলেজ থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। সবাই মিলে মেয়ের বিবাহ বার্ষিকী পালন করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বিবাহ বার্ষিকী পালন হয়নি। তাঁর জন্মদিন পালন করেছিলাম।
ফর্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ইসরাতের মামা আলা উদ্দিন বলেন, দুই বছর পূর্বে রিপনের সাথে ইসরাতের আকদ হয়েছে। উভয় পরিবারে হয়তো কোন বিষয়ে মনমালিন্য হয়েছে। অপহরণের মত কোন ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই।
এই বিষয়ে মিরসরাই থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞ আদালত থেকে ভিকটিমকে (ইসরাত সুলতানা) উদ্ধার করার জন্য মিরসরাই থানা ও খুলশি থানায় নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। দুই বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here