মিরসরাইয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গরু চোর চক্র, আতঙ্কে মালিকরা

358

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ গরু চোর চক্র। প্রতি রাতে উপজেলার কোন না কোন গ্রাম থেকে গরু চুরির ঘটনায় আতংকে দিন কাটছে গরু মালিকদের। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় রাত জেগে পাহারা দিয়েও গরু রক্ষা করতে পারছে না মালিকরা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর)) রাতে উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ারিয়া এলাকার ক্লিপটন ডেইরী খামার থেকে ৩টিসহ ওই এলাকা থেকে ৬টি গরু নিয়ে যায় ওই চক্র। প্রতিরাতে গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও চক্রটি ধরতে পুলিশ প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, মিরসরাই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে গরু চুরির ঘটনা। সংঘবদ্ধ গরু চোরেরা রাতের বেলায় ছোট ট্রাক (পিকআপ) নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরু নিয়ে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার (৫ডিসেম্বর) রাতে খইয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ার দীঘির পাড়ে ক্লিপটন ডেইরী খামার থেকে ৩ টি বড় গরুসহ ওই এলাকা থেকে ৬টি গরু নিয়ে যায়। এসময় গরু চুরিতে বাঁধা দেয়ায় স্থানীয় একব্যক্তিকে চোরের দল বেদম ভাবে পিটিয়ে আহত করে। নয়দুয়ার থেকে নিয়ে যাওয়া গরু গুলোর দাম প্রায় ৫ লাখ টাকা। গত ২৬ নভেম্বর হাইতকান্দি ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রাম থেকে জয়নাল আবেদীনের ৩টি ও জিয়া উদ্দিনের ২টি গরু নিয়ে যায়। মসজিদিয়া গ্রামের নেপাল নাথের গোয়াল ঘর থেকে নিয়ে যায় ৩টি গরু, পোলমোগরা এলাকা থেকে ১০টি গরু, মঘাদিয়া ও মায়ানী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে ১৫টি গরু, ওয়াহেদপুর ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন থেকে ১০টি গরুসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গত এক মাসে প্রায় শতাধিক গরু চুরি হয়। প্রায় প্রতি রাতে গরু চুরির ঘটনায় গরু মালিকদের রাত কাটে আতঙ্কে।

হাইতকান্দি ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন ও জিয়া উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন যাবত গরু চুরির ঘটনা ঘটছে জেনে প্রায় রাতে গরু পাহারা দেন। কিন্তু যেদিন গরু চুরি হয় সেদিনও রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্তও গরু পাহারা দিয়ে ঘুমাতে যায়। রাত দেড়টার পর কোন একসময় গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। শহীদুল্লাহ নামে এক গরুর মালিক বলেন, কিছিুদিন আগে তার গোয়াল ঘর থেকে ৩টি গরু চুরি হয়ে যায়। তার সংসারের একমাত্র সম্বল ছিল ওই ৩টি গরু। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদনি ধরে মিরসরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরির ঘটনা ঘটে আসছে। রাতের আধাঁরে ট্রাকে করে মহাসড়ক দিয়েই চোর চক্র গরু গুলো নিয়ে যায়। রাতে মহাসড়কে পুলিশের গাড়ি টহলে থাকে। কিন্তু এ পর্যন্ত পুলিশ কোন গরু চোর বা চোরাই গরু ধরতে পারেনি। গরু চুরির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন এবারে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। ফলে মানুষের মনে গরু চুরি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

খইয়াছাড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সরওয়ার উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাতের বেলা সংঘবদ্ধ চোরের কয়েকটি দল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই গরু গুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক দাঁড়া করিয়ে পাচার করা হয়। কিন্তু রাতে মহাসড়কে পুলিশের টহল থাকলেও গরু চোরাই দলকে কেন প্রতিরোধ করতে পারছে না তা রহস্য জনক।

ছরারকুল গ্রামের গুরামিয়া জানান, তার ৬০ হাজার টাকা দামের একটি গরু চুরি করে ট্রাকের তোলার সময় গরুটি ছুটে চলে যায়। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যরা রাতে গরু পাহারা দিয়ে রেখেছেন। মসজিদিয়া গ্রামের আবুল কালাম, কবির আহম্মদ, কাজল দাস জানান, তারা রাতে গরু পাহারা দিয়ে রাখছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন গরু পাহারা দিয়ে রাখবেন বুঝতে পারছেন না।
মিরসরাই থানার ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, গরু চুরির ঘটনায় কোন মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ করে না। এরপরও গরু চুরিসহ এলাকায় অন্যান্য অপরাধ কমাতে পুলিশ সজাগ রয়েছে। গরু চোর চক্রটি ধরতে ইতিমধ্যে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here