সম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ভাই আবদুর কাদের মির্জা বলেছেন, সত্য বলায় কেউ আমার সাথে নেই।
রোববার সকালে নোয়া বসুরহাট পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের হাজীপাড়া এলাকায় এক নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের আমার সাথে নেই, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমার সাথে নেই। নোয়াখালী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র পাঠিয়েছে। ফেনী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র পাঠিয়েছে। কোম্পনীগঞ্জ আওয়ামী লীগ আমার সাথে নেই, পৌরসভা আওয়ামী লীগ আমার সাথে নেই, ডিসি-এসপি-নির্বাচন কমিশনারও আমার সাথে নেই। আমি সত্য কথা বলায় কেউ আমার সাথে নেই।
কাদের মির্জা কেন্দ্রীয় কিছু নেতার উদ্দেশে বলেন, আমি বেঈমানের চেহারা দেখব না। তাদের ওপর আল্লার গজব পড়বে। কেন্দ্র থেকে যারা এসব করছে তারা আবার বলছে, আমি ঈমানদার, আমি নেক্কার, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তোরা বেঈমান, তোরা মুনাফেক, তোরা মানুষের সাথে কথা বলে ওয়াদা রাখিস না। আমি ওয়াদা রক্ষা করি, কয়েক বছর ওয়াদা রক্ষা করেছি। অধিকাংশ মানুষ আমার সুনাম করে। এক আনা মানুষ আমার সমালোচনা করে।
তিনি আরো বলেন, বসুরহাট ও আমাদের উপজেলার নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে ভয় পায়, একরাম চৌধুরীকে ভয় পায়, নিজাম হাজারীকে ভয় পায়। আসতে-যেতে মেরে ফেলে নাকি? এটা হচ্ছে মূল ঘটনা। আপনারা সাধারণ কর্মীরা থাকলে আমি ভোট করব, না হয় বাড়ি গিয়ে শুয়ে থাকব। ভোট একটা পেলে একটা, ভোট দিলে দিবে না হয় না দিবে। তিনবার নির্বাচন করেছি, আর খায়েশ নেই। আপনারা থাকলে আমি বের হব, নাহলে বের হব না।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি, নোয়াখালীর রাজনীতি, ফেনীর রাজনীতি আমার অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা কোথায় যাচ্ছি। আমি শপথ করেছি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। আমি কি এটার বাহিরে গেছি? এ নির্বাচনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি, নির্বাচন আমার কাছে মূখ্য নয়। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।
ওবায়দুল কাদের সাহেব অসুস্থ, যখন বলেন আমি মরে যাব, আমাকে এটা দুর্বল করে। ওনার বুঝা উচিত, ওনি জাতীয় নেতা। গোপালগঞ্জের কোনো নেতা আমাকে পাগল বলে, উম্মাদ বলে। আমিতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। ফেনীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বলি, ভোট কারচুপির প্রতিবাদ করি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার এলাকার মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য বলি, যেখানে কোম্পনীগঞ্জের গ্যাস পাওয়া গেছে শাহাদাতপুর, হাবিবপুর, সেখানে লেখা হয় সুন্দলপুর। আমি যখন এটার প্রতিবাদ করি, যখন বলি ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছে ঘরে ঘরে চাকরি দিবে, ওই চাকরি কোথায়? আমি যখন এটার প্রতিবাদ করি তখন আমি পাগল। আরেক নেতা বলে দায়িত্বশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমি ৪৭ বছর রাজনীতি করি ওনারা কয় বছর করে?।’
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে আমার পরিচয় আছে, আমার জুনিয়র, ওনি টকশো’তে এসে বলেন আমি নাকি জামায়াত-বিএনপির ভোট নেয়ার জন্য এসব বলি। আমার অবস্থা নাকি খারাপ। এখানে দল নাকি দু’ভাগ, দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। এখন জিতব না সেজন্য নির্বাচনী কৌশল নিয়েছি।
তিনি নজরুল ইসলাম বাবুর উদ্দেশে বলেন, এরা একসময় ওবায়দুল কাদেরকেও আগাতে দেয়নি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চেয়েছে ফল, দুর্নীতিবাজ প্রশাসন ফলসহ দিয়ে দিয়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসন পেয়েছিল দুইটা। সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, ফেয়ার ভোট হয়েছিল তখন। একরাম চৌধুরীর নেতৃত্বে নাকি বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। কে ভেঙেছে? কোন জায়গায় ভেঙেছে? তিনি জিতেছেন মেজর মান্নান প্রার্থী হওয়াতে। লজ্জা লাগে না?। নিজাম হাজারী নাকি ফেনীর বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে? আমি লক্ষ্মীপুর নিয়ে বলব না, সেটা সর্ম্পকে আমার অভিজ্ঞতা নেই কিন্তু ফেনী আমার দুই বাড়ি পর, কতটুকু দুর্গ ভেঙেছে? আমি ভালো করে জানি। এ কথাগুলো বলছি যাতে নেত্রী এখন থেকে সজাগ হয়। এখনো তিন বছর সময় আছে। এদের লুটপাটের ও অনিয়মের ইতিহাসগুলো আমাকে বলতে হবে। আমি বলেছি ফেয়ার নির্বাচন হলে এরা পালানোর জন্য দরজা খুজে পাবে না। যদি এটার ব্যতিক্রম হয় তাহলে জিহ্বা কেটে ফেলব, বাংলাদেশ থেকে চলে যাব, হিজরত করব, যদি একরাম চৌধুরী ফেয়ার ভোটে জামানত পায়, যদি নিজাম হাজারী জামানত পায় তাহলে হিজরত করব।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, সেনবাগে আরটিভির মোরশেদ সাহেবকে দেয়া হয়েছে। তিনি কি দলের রাজনীতিতে আছেন? কিছু কিছু লোক প্রতিযোগিতা করে তাদের দেয়ার জন্য, তাদের দিলে টাকা পয়সা আছে, মানুষের ভোট কিনতে পারবে। তারাই দেশের ভোটের রাজনীতি ধ্বংস করেছে।
এ সময় দলের উপজেলা ও পৌর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।