সিসিটিভির আওতায় আসছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-অপরাধ দমনে থাকছে আরো নানা প্রযুক্তি

336

নিজস্ব প্রতিনিধি

দুর্ঘটনা রোধ ও অপরাধ দমনে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সিসিটিভির আওতায়। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিক করতে ২৪ ঘণ্টাই ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে ঢাকা–চট্টগ্রাম ফোরলেন মহাসড়ক। এমন কী স্পষ্ট ভাবে নম্বর প্লেট পড়তে পারে এমন আধুনিক যন্ত্রও কিনতে যাচ্ছে মহাসড়কে যানবাহনের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মহাসড়কে ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ, অত্যধিক গতি শনাক্তকরণ, সন্দেহজনক যানবাহন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যানবাহন ট্র্যাক করা, রাস্তায় গতিশীল ট্রাফিক প্রবাহ তথ্যে বাস্তবিক অবস্থা ও ট্রাফিক নির্দেশ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস দমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্য ও ইয়াবা চোরাকারবারীদের গ্রেফতার ও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের জন্য এই সড়কে ব্যবহার করা হবে উন্নত প্রযুক্তি। প্রতিটি সড়কেই থাকবে সিসি ক্যামেরা, উন্নত প্রযুক্তির ডিভাইস ও সফটওয়্যার সিস্টেম। ফলে সড়কে যেকোনো ধরনের অবৈধ বস্তু ১৫ মিনিটের মধ্যে শনাক্ত করে সংকেত বাজবে ও পুলিশের হাতে ধরা পড়বে। এমন কী বেপরোয়া গতির যানও ধরা পড়বে এই পদ্ধতিতে।

এ বিষয়ে ফোরলেন এর চট্টগ্রাম বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সর্বস্তরের সকলের নিরাপত্তার পাশাপাশি সড়কের প্রতিটি অংশের রক্ষণাবেক্ষন সম্ভব হবে দ্রুত গতিতে। মীরসরাই থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন আমাদের অনুসন্ধানী কার্যক্রম কমিয়ে অপরাধ দমন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব হবে, যা পুলিশবাহিনীর জন্য অনেক সুফলদায়ক হবে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৬৪ কিলোমিটার রাস্তায় স্থাপন করা হবে ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা। পরে সেগুলো থেকে নেওয়া ফুটেজগুলো অ্যানালাইসিস করা হবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। কোনো গণপরিবহনে ছিনতাই ও ডাকাতি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়বে অপরাধীরা।

‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্নত দেশের মতো ঢাকা–চট্টগ্রাম মাহাসড়ের ফোরলেনকে ঢেলে সাজানো হবে। এমন উদ্যোগ দেশে প্রথম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হবে। এর মধ্যে– রেকার, ভেহিস্যাল, স্টোপার, স্পিড ডিটেক্টর, অ্যাম্বুলেন্স ও স্ক্যানার ইত্যাদি।

পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (উন্নয়ন) গাজী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম ফোরলেন জুড়ে থাকবে সিসি ক্যামেরা। শুধু সেগুলোই নয় এর পাশাপাশি কেনা হবে উন্নত ডিভাইস–সফটওয়্যার সিস্টেম। এমনকি ফোরলেনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলায় পড়বে ফিটনেসবিহীন ও বেপরোয়া গতির যানবাহন। তিনি বলেন, আমরা দু‘টি উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখেই এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। এই সড়কে কোনো অপরাধী গাড়ি আটকে ডাকাতি করতে পারবে না। কোনো কারণ ছাড়া ফোরলেনে সন্দেহভাজন ঘোরাঘুরি করলে ধরা পড়বে। নিরাপত্তা জোরদার হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলতে পারবে না। আমরা নির্দিষ্ট গতিসীমা বেঁধে দিয়েছি এর বেশি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলা হবে। যানবাহনের নম্বর প্লেট রিড করতে পারে এমন যন্ত্রপাতিও কেনা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে আরো জানা যায়, সড়কে যেকোনো ঝুকিপূর্ণ বস্তুও শনাক্ত করা যাবে এতে। হঠাৎ কোনো বস্তু ১৫ মিনিটের বেশি সময় সড়কে থাকলে আমাদের কাছে সংকেত বাজবে। তখনই এটা উদ্ধার করা হবে। এছাড়া সড়কে থাকা কোনো সরকারি মালামাল কেউ গায়েব করলেও ধরা পড়বে। যেমন ফোরলেনে হয়তো ময়লার কোনো ডাস্টবিন আছে অনেক সময় এগুলো চুরি হয়। কেউ এগুলো চুরি করলেও ধরা পড়বে, এলার্ম জেনারেটর। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করলেও এলার্ম জেনারেট করবে এবং ধরা পড়বে। ক্যামেরার মধ্যে থাকে থাকবে সফটওয়্যার। প্রথমে ক্যামেরার ছবি সংগ্রহ হবে। পরে ছবিটা ডাটা–সফটওয়্যারে এনালাইসিস করেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের মাধ্যমে পুলিশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি থাকবে সেন্ট্রালাইজড এবং বিশ্বমানের সিস্টেম। এসব কাজ হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মহাসড়কে দুর্ঘটনাজনিত মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি থাকবে আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে একটি আধুনিক ইউনিফর্ম কমান্ড, কন্ট্রোল ও মনিটরিং প্লাটফর্ম।

বাড়বে পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতা। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২২২ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। চলতি মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায়, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের গতিপথ শনাক্তকরণ, পাবলিক অনুপ্রবেশ শনাক্তকরণসহ সড়কে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সন্দেহজনের ঘোরাফেরা, পরিত্যক্ত বস্তু শনাক্তকরণ, বস্তু অপসারণ শনাক্তকরণ করা হবে।

অতিরিক্ত ডিআইজি (উন্নয়ন) গাজী মো. মোজাম্মেল হক আরো বলেন, ফোরলেনে যানজট নিরসনে থাকবে ই–পুলিশ, ইন্টেলিজেন্ট ক্যামেরা চেকপোস্ট। ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমেও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংস্লিষ্টদের নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের উপ–প্রধান (আর্থ–সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ) মোহাম্মদ বোরহানুল হক, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের আইন–শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণে একটা প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য আনুষঙ্গিক উন্নয়ন ও করা হবে। এমন উদ্যোগ এবার প্রথম নেওয়া হচ্ছে ফোরলেনে। যা বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যেতে পারে ফোরলেন এর দৃশ্যপট। কমে যেতে পারে দূর্ঘটনা ও নানান অপরাধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here