খালেদা জিয়াকে ভোট থেকে সরাতেই ফরমায়েশি রায় : ফখরুল

297

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতেই ফারমায়েশি রায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

রায়ের পর রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়া হয়েছে। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি।’

খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাননি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে এখন নিম্ন আদালতে মানুষ আর ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। গোটা দেশে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সে জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে তারা তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা আবার তারা এখানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এ দেশের মানুষ অতীতেও তা মেনে নেয়নি, এখনো মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা বারবারই বলে আসছেন, যে করেই হোক তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন।’

এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী জেলা সদর এবং ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ রায়ের সময় আদালতে হাজির ছিলেন না। এমনকি এই মামলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তাঁর কোনো আইনজীবীও যাননি রায় শুনতে। ছিলেন না অন্য আসামিদের আইনজীবীরাও। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন।

এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। তাঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত আজ এই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here