নামের মিল থাকায় প্রকৃত আসামির বদলে কারাগারে পাঠানো নিরীহ সেই ব্যবসায়ী জাহেদুল আলমকে ‘চেক প্রতারণা’র দুটি মামলায় অব্যাহতি দেওয়া হল। এ নিয়ে মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বিশদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বুধবার (৯ ডিসেম্বর) ওই দুটি মামলার পৃথক পৃথক শুনানির পর চট্টগ্রাম মহানগরের প্রথম ও দ্বিতীয় দায়রা জজ আদালত অব্যাহতি দেন জাহেদুলকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জাহেদুল আলমের আইনজীবী মোহাম্মদ এমরান নাঈম বলেন, দুই মামলাতেই নিরীহ ব্যবসায়ী জাহেদুল আলমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আদালত নিশ্চিত হয়েছেন, পুলিশের যাকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনি প্রকৃত আসামি নন। তবুও তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে যাচাই-বাছাই না করেই।
তিনি জানান, আদালতে ইসলামী ব্যাংকের হালিশহর শাখার কর্মকর্তা জাহেদুলকে শনাক্ত করে আদালতকে বলেছেন, ব্যাংক যার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি ওই আসামি নয়। সুতরাং তাকে মামলা থেকে অব্যহতি দিলে তাদের আপত্তি নেই।
চেক প্রতারণার অপর মামলার বাদি দেশে না থাকায় আদালত একটু সময় নিয়ে ধলই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দুই ঘন্টার মধ্যে আদালতে তলব করেন। পরে চেয়ারম্যান চেক প্রতারণা মামলায় প্রকৃত আসামি জাহিদুল আলমের বাড়িও একই এলাকায় বলে আদালতকে জানান। আটক লোক ঘটনায় জড়িত নন— এটি নিশ্চিত হয়েই আদালত তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
নামের আংশিক মিল থাকায় অপরাধ না করেও চেক প্রতারণার দুটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত হিসেবে তাকে জেলে পাঠায় হাটহাজারী থানা পুলিশ। এতে হাটহাজারী থানা পুলিশ আসল আসামিকে আড়াল করতে জাহিদুল আলমের বদলে জাহেদুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে অভিযোগ ওঠে।
গত ৫ ডিসেম্বর ওয়ারেন্টের আসামি হিসেবে মো. জাহেদুল আলম নামের ওই ব্যবসায়ীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। হাটহাজারীর সিটি সেন্টারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ ওয়ারেন্টের প্রকৃত আসামির নাম জাহিদুল আলম। জাহেদুল ও জাহিদুলের নামের খানিকটা মিল থাকলেও তাদের বাবা ও মায়ের নাম ভিন্ন। জাতীয় পরিচয়পত্রও ভিন্ন। তবে কাকতালীয়ভাবে দুজনেরই বাড়ি হাটহাজারীর কাটিরহাটের ধলই ইউনিয়নে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটহাজারী থানা পুলিশ বিশদভাবে যাচাই-বাছাই না করেই প্রকৃত আসামি ‘জাহিদুল আলমের’ বদলে জাহেদুল আলমকে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তার পরিবারের অভিযোগ, প্রকৃত আসামিকে বাঁচাতেই পুলিশ এমন কাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় এমএস ব্রাইড সোপ ফ্যাক্টরির মালিক জাহিদুল আলম। তিনি ওই ফ্যাক্টরির নামে ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখা থেকে ৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। খেলাপি হওয়ায় ২০১৮ সালে জাহিদুল আলমের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা (নং ৩৮/২০১৮) দায়ের করেন ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখার জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। এ মামলায় জাহিদুলকে এক বছরের সাজা দেন চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
এর আগে ২০১৬ সালে ১১ লাখ টাকা পাওনা আদায়ের জন্য জাহিদুল আলমের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা (সিআর ১৩০৬/২০১৬) করেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার হাজী আজগর আলী মার্কেটের সোহা এন্টাপ্রাইজের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকী। এই মামলায়ও জাহিদুলকে দুই মাসের সাজা দেন আদালত।
এই দুই মামলারই আসামি মো. জাহিদুল আলমের পিতা ফরিদ আহমদ এবং মাতা ফরিদা আক্তার। তার বর্তমান ঠিকানা বাড়ি নং ৭৯, রোড ১, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, থানা: ডবলমুরিং, চট্টগ্রাম। অন্যদিকে স্থায়ী ঠিকানা পশ্চিম ধলই, ডাকঘর: কাটিরহাট, থানা: হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯২…..৬৩৬০।
দুই মামলাতেই গত বছরের ৩০ মে জাহিদুলের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত। ওই ওয়ারেন্টের কপি হাটহাজারী থানায় পাঠানো হয়।
জানা গেছে, গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুই মামলারই এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কিন্তু যাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে, তিনি হচ্ছেন মো. জাহেদুল আলম। তার পিতা ফরিদুল আলম এবং মা হালিমা বেগম। তার ঠিকানা— ছোটকা মজুমদার বাড়ি, পশ্চিম ধলই, ডাকঘর কাটিরহাট, থানা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯২…..২০২০।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) নামের মিলে জেলে যাওয়া মো. জাহেদুল আলমের আইনজীবী মোহাম্মদ এমরান নাঈম বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক হালিশহর শাখা থেকে প্রকৃত আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্টিফাইড কপি আনা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ওয়ারেন্টের ব্যক্তির ছবির সাথে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির চেহারার কোনো মিল নেই। দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরও আলাদা। নামেই শুধু আংশিক মিল। স্থায়ী ঠিকানায় মিল থাকলেও বাবা ও মায়ের নামের মিল নেই। অথচ ব্যাংকের সাথে প্রতারণা না করেও জেল খাটছে জাহেদুল আলম।’
এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ওই সময় বলেছিলেন, ‘পুলিশ মনে করেছে এ লোক ওয়ারেন্টভুক্ত সেই লোক। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই লোক আসল অপরাধী না হলে অবশ্যই ছাড়া পাবে।’