হঠাৎ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। জোর দাবি উঠেছে, দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যার। অভিযোগ গুরুতর। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনায় গায়ে জ্বালানি তেল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটির নিন্দা এসেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এসেছে বিচারের নিশ্চয়তা। আটক হয়েছে অন্তত ১৭ জন। দুইজন নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।
আসামিরা দ্রুত শনাক্ত হয়ে যাওয়ায় বিচার নিয়ে আশাবাদ যেমন আছে, তেমনি অতীতের নানা ঘটনায় সংশয়ও আছে। কারণ আলোচিত বেশ কিছু হত্যার তদন্ত আছে থমকে, কারা খুন করেছে সেটা জানা যায়নি কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারো কারো নাম এলেও আগায়নি বিচার।
এবার দেখে নেওয়া যাক তুমুল আলোচিত বেশ কিছু হত্যার বিচার কতদূর আগাল।
তিমিরে তনু হত্যার তদন্ত
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলা তিন বছর ধরে সিআইডির ল্যাবে ‘বন্দি’। পুলিশ বলছে, ‘কাজ চলছে’। আর পরিবারের অভিযোগ, ‘তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই পুলিশের।’
২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি বাসায় পড়াতে গিয়েছিলেন তনু। পরে তার মরদেহ পাওয়া যায় পাশের একটি জঙ্গলে। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ হয় সারা দেশেই।
সে সময় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। থানার পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর স্পষ্ট কারণ জানায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এই সময়কে বলেন, ‘আমরা দেড় বছর হলো ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের নমুনা ল্যাবে পাঠিয়েছি। কিন্তু ওই প্রতিবেদন আমরা এখনো হাতে পাইনি। এটা বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে আমরা মামলার তদন্তের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারব। তবে আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত কাজ অব্যাহত রেখেছি।’
রহস্য হয়েই রইল মিতু হত্যা
চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা নিয়ে তোলপাড় হলেও তদন্তে নেই এতটুকু অগ্রগতি। আড়াই বছর ধরেই এক বিরাট রহস্য হয়ে রয়েছে মামলাটি। ইচ্ছা করেই সব আটকে রাখা হয়েছে কি না এ নিয়ে কানাঘুষাও কম নয়। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে তা বলতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী বাবুল আক্তার। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি সে সময় ব্যাপক সহানুভূতি তৈরি হয়। পরে নিজ বাহিনীর চাপে তিনি চাকরি ছাড়েন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। যদিও পুলিশ তা স্বীকার করে না। আর এ নিয়েই তৈরি হয়েছে রহস্য।