বিশেষ প্রতিনিধি
সুযোগ পেলেই দেখে আসতে পারেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মুহুরি প্রজেক্ট। চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাইয়ের মুহুরি প্রকল্প সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে এই জনপদকে। একদিকে পাহাড় আর অপরদিকে সমুদ্র নিকটবর্তী অরণ্য, সাথে নদী, ঝরনা, বন্যপ্রাণী, প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যময় সম্পদে সমৃদ্ধময় এক জনপদ মিরসরাই। এখানকার মুহুরি প্রকল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এর অবদান বিশাল।
পাশাপাশি মুহুরি সেচ প্রকল্প হতে পারে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ এবং এর পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক অনাবিল নৈসর্গিক শোভা যে কোন পর্যটককে আকর্ষিত করতে পারে। পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে গৃহীত যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে এটিকে গড়ে তোলা যায় একটি অনন্য আধুনিক পর্যটন কেন্দ্ররুপে। যা থেকে দেশের পর্যটন খাতে আয় বাড়তে পারে অনেকখানি।
এক সময় ছিল মুহুরি প্রকল্পের স্থানে ছিল দেড় দুই মাইল প্রশস্ত নদী। এপার ওপার ছিল বিচ্ছিন্ন। ফেনী নদী এবং মুহুরি নদীর দু’তীরকে সেচ সুবিধার আওতায় আনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সীমান্ত বরাবর বয়ে যাওয়া ফেনী নদী এবং মুহুরি নদীর মোহনার কিছুটা ভাটিতে নির্মিত মুহুরি সেচ প্রকল্প। প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ফেনী উন্নয়ন বোর্ড। মুহুরি প্রকল্পের অধীনে রয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম থানার আংশিক এবং মিরসরাই উপজেলার উত্তরাঞ্চলের বিরাট এলাকা। প্রকল্পাধীন এলাকার আয়তন ৪০,০৮০.৯২ হেক্টর। দেশের যে কোন স্থান থেকে মুহুরি প্রজেক্টের সড়ক যোগাযোগ তথা যাতায়াত ব্যবস্থা যথেষ্ট সুবিধাজনক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই এলাকার জোরারগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে, সেটিই একমাত্র রাস্তা। জোরারগঞ্জ থেকে প্রজেক্ট পর্যন্ত আট কিলোমিটার রাস্তাতেই রয়েছে নিয়মিত বাস, জীপ, সিএনজি সার্ভিস।
একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবে মুহুরি প্রজেক্টে ভ্রমণের পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। জোরারগঞ্জ থেকে প্রজেক্ট রোডে ৮ কিলোমিটার চলার পর প্রকল্পের দীর্ঘ ড্যামের (বাঁধের) পূর্ব পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে অথবা রিক্সা করে ড্যামের পশ্চিম প্রান্তে দর্শনীয় স্থান রেগুলেটর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাঁধের উত্তরের নীল জলরাশি আর দক্ষিণের দিগন্ত বিস্তৃত চর এবং প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত পরিবেশ, পাইন গাছের সারি, ঝাউ বন, প্রাকৃতিক ছনফুলে ভরা ঘাস প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত পরিবেশ যে কোন পর্যটককেই আকর্ষণ করতে পারে।
দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ চল্লিশ দরজা বিশিষ্ট সারিবদ্ধ রেগুলেটর। এছাড়া বাঁধের মূলগোড়া থেকে প্রকল্পে প্রবেশ না করে বেড়িবাঁধ দিয়ে সোজা দক্ষিণে এলেই রয়েছে উপকূলীয় বনবিভাগ কর্তৃক সৃজন করা কৃত্রিম বন। এখানে বনের ফাঁকে ফাঁকে সর্পিল আকারে বয়ে গেছে নদী, বনে রয়েছে কৃত্রিম উপায়ে ছাড়া হরিণ, বানরসহ অনেক বন্য পশুপাখি।
এখানে পর্যটকদের জন্য উন্নত সহজ কোন হোটেল বা রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই। তাই নিজ দায়িত্বে খাবারের আয়োজনের জন্যে রেগুলেটরের উত্তর পশ্চিমের ছোট বনে রান্না বান্না ও ভোজের আয়োজন করা যেতে পারে। একটি মাত্র ক্যান্টিন রয়েছে তাও আবার পর্যটক অপ্রতুলতার জন্য অনিয়মিত। দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ২/১টি অস্থায়ী ভাসমান চা দোকান বসে। তবে এখানে রাত কাটানোর কোন সুব্যবস্থা নেই। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মুহুরি সেচ প্রকল্প একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। পর্যটন কর্পোরেশন এ যাবৎ কোন বৃহত্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। এখনো প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী দূর দূরান্ত হতে এসে প্রজেক্টের আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী দেখে রোমাঞ্চিত হয়। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় এখানে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ও আনসার ক্যাম্প। উন্নত এবং আধুনিক ব্যবস্থায় রাত্রিযাপন, খাবারের আয়োজন থাকলে এ স্থানটি আরো আকর্ষণীয় হতে পারে।